দাঁইহাটে ডাকাতদের শুরু করা পুজো এখন সর্বজনীন হয়ে উঠেছে
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: দাঁইহাটের ডাকাতে কালীর পুজো একসময়ে ডাকাতদের দ্বারা শুরু হলেও এখন তা সর্বজনীন পুজোয় পরিণত হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা এই পুজো ঘিরে মেতে ওঠেন।
দাঁইহাটের ডাকাতে কালীর পুজো ঠিক কত সালে শুরু হয়েছিল তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেন না। তবে এলাকায় জনশ্রুতি, একসময়ে ওই এলাকায় ঘন জঙ্গল ছিল। নদীয়া জেলার বেশ কিছু দুর্ধর্ষ ডাকাত এই অঞ্চলে ডেরা বেঁধেছিল। তারাই গভীর রাতে মা কালীর পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে বেরত। তবে সেসব এখন ইতিহাস। দাঁইহাট স্কুল রোড ইয়ং গ্রুপের কয়েকজন সদস্য আগে থেকেই শুনতেন ওই এলাকা ডাকাতে কালীতলা নামে পরিচিত। তাঁরা শুনেছিলেন, ওই জঙ্গলে নাকি একসময়ে ডাকাতরা কালী পুজো করত। সেই ইয়ং গ্রুপের সদস্যরা ১৯৬৯ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুনরায় ডাকাতে কালীর পুজো শুরু করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শান্তিলাল বন্দোপাধ্যায়, সমীর মণ্ডল, প্রদীপ ভক্ত, প্রবীরেন্দু মণ্ডল, পীযুষ ভক্ত, মৃণাল দেবনাথ, চিত্তরঞ্জন ভক্ত বলেন, আমরা ছোটবেলায় শুনেছিলাম ওই এলাকায় নাকি ডাকাতরা পুজো করত। পরে আমরা ঠিক করলাম ফের ডাকাতে কালীর পুজো করব। নতুন মন্দিরের ভিত খোঁড়ার সময় পুরানো কয়েকটি ইঁট দেখতে পেয়েছিলাম। এখানে মা খুবই জাগ্রত।
অন্যদিকে মঙ্গলকোটের পালিগ্রামের খেপাকালীর পুজো এখনও সতীশ তান্ত্রিকের পুজো নামে পরিচিত। স্থানীয়রা জানান, বহু বছর আগে একসময়ে গ্রামে এক নির্জন জায়গায় সতীশ চক্রবর্তী নামে এক তান্ত্রিক কালী সাধনা করতেন। পরে তিনি মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান। তারপর সতীশ চক্রবর্তী নামে ওই তান্ত্রিক মা কালীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। সেদিনের সেই তান্ত্রিকের পুজো খেপাকালী রূপে আজও পূজিত হয়ে আসছে। সেবায়েতরা জানান, প্রায় ২৫০ বছর আগে খেপাকালী প্রতিষ্ঠা হয়। সতীশ তান্ত্রিক নিজেই মায়ের মূর্তি গড়ে পুজো শুরু করেন। সেই থেকেই মঙ্গলকোটের পালিগ্রামে খেপাকালীর মূর্তি এখনও ব্রাহ্মণ দ্বারাই গড়া হয়। এই পুজোর বিশেষত্ব হল, তান্ত্রিক মতে মধ্যরাতে পুজো হয়। ঘট বিসর্জন, আরতি, অধিবাস এসব কিছুই হয় না। তবে এখনও পুরানো রীতি মেনে প্রতিমার বিসর্জন হয় ব্রাহ্মণ দ্বারা। অন্যদিকে চানক অঞ্চলের পালপাড়া গ্রামের বাইরে রাখাল বালকরা প্রায় ২৫০ বছর আগে খেলার ছলে কালীপুজো শুরু করে। গ্রামের বাসিন্দারা সেই থেকেই গ্রামের ভিতরে মায়ের পুজো শুরু করে। সেই থেকেই এই কালীর নাম ছেলেকালী। এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভাতৃদ্বিতীয়ার পর প্রতিমা বিসর্জন হয়। মাটিতে গর্ত করে দেবীর ভোগ রাখা হয়। দুই গ্রামেই কালীপুজো উপলক্ষ্যে উন্মাদনায় মেতে ওঠেন বাসিন্দারা।