‘ডানা’র ধাক্কা, একদিনের বৃষ্টিতে একযুগের রেকর্ড ভাঙল কলকাতা
বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়লেও বঙ্গোপসাগরের তীব্র ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র লেজের ঝাপটাতেই’ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বহু জায়গায়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলিয়ে কোনও কোনও জায়গায় ২০০ মিলিমিটারের (মিমি) বেশি বৃষ্টিও হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ ও ডায়মন্ডহারবারে এই দু’দিনে মোট ২০৭ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। কলকাতা, বর্ধমান, হলদিয়া, পানাগড়, কল্যাণী, উলুবেড়িয়া, মেদিনীপুর, কলাইকুণ্ডা, বারাকপুরে একদিনে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল একশো মিমি’র বেশি। গত ১২ বছরের মধ্যে অক্টোবর মাসে একদিনে সবথেকে বেশি বৃষ্টি শুক্রবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে কলকাতায়। ২০১২ সাল থেকে শহরে অক্টোবর মাসের বৃষ্টির পরিমাণের যে পরিসংখ্যান আবহাওয়া দপ্তরের রেকর্ডে আছে, তার থেকে এটা জানা যাচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গে বেশি এলাকা জুড়ে অধিক মাত্রায় বৃষ্টি হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুরে (১৭০ মিমি)। যদিও রাজ্য কৃষিদপ্তর শুক্রবার থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় ১৯৯ মিমি বৃষ্টিপাতের তথ্য আবহাওয়া দপ্তরকে জানিয়েছে। দুই মেদিনীপুর জেলার আরও কয়েকটি জায়গায় ১৮০ মিমি বা তার বেশি বৃষ্টি হওয়ার খবর মিলেছে। ডানা পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলের থেকে তুলনামূলকভাবে কাছে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়লেও, ওই জেলার দীঘা, কাঁথি প্রভৃতি উপকূল সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার থেকে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ওই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ ১০ মিমিও অতিক্রম করেনি। আবহাওয়া অধিকর্তা এইচ আর বিশ্বাস জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বৃষ্টির পরিমাণের তারতম্য হয়ে থাকে। তবে পুরো রিপোর্ট পাওয়া গেলে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এত বেশি বৃষ্টিতে মাঠে থাকা পাকা ধান ও সব্জির ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আলিপুর আবহাওয়া অফিসে ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিভুক্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে অক্টোবরে একদিনে ১০৯ মিমি বৃষ্টি হওয়ার নজির আছে। দমদমেও ২০১২ সাল থেকে এত বেশি বৃষ্টি হয়নি। দমদমে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। আলিপুরে ১৯৫৯ সালের পয়লা অক্টোবর একদিনে সর্বকালীন বেশি ২০৬ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল। এবার ডানার প্রভাবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলিয়ে আলিপুরে মোট বৃষ্টি হয়েছে ১৬০ মিমি। দমদমে এই সময়ে ১১৯ মিমি ও সল্টলেকে ১১৭ মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে উপকূল অতিক্রম করার পর ঘূর্ণিঝড় ডানা শনিবার আরও শক্তি হারিয়ে উত্তর ওড়িশার উপর সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবারের মধ্যে এটি আরও দুর্বল হয়ে পুরোপুরি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছেন। শনিবারও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতে বৃষ্টির মেঘ তৈরি হয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি রবিবারের পর আরও অনেকটা কমে যাবে। আপাতত আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গে কোথাও কোথাও শুধু বিক্ষিপ্তভাবে হাল্কা বা মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। উত্তরবঙ্গেও পরিস্থিতি এরকমই থাকবে।