• কালো টেপ দিয়ে নম্বরপ্লেটের সংখ্যা বদলে চলছে বাইক! অপরাধ চক্রের খোঁজে লালবাজার
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘ধর্মতলা কে সি দাসের মোড়ে সিগন্যাল ভেঙেছেন। ক্যামেরায় আপনার গাড়িটি চিহ্নিত করে ট্রাফিকবিধি লঙ্ঘনের কেস দেওয়া হল ৫০০ টাকা।’ দিনকয়েক আগে ফোনে এমন মেসেজ পান গরফার এক বাসিন্দা। অথচ, গত একমাসে ধর্মতলামুখোই হননি ওই বাইকচালক। তাহলে ওই এলাকায় তাঁর পক্ষে কীভাবে ট্রাফিক আইন ভাঙা সম্ভব? 

    লালবাজারের দ্বারস্থ হতেই জট খুলল রহস্যের। পুলিসের নজর এড়াতে এক অভিনব কৌশল সামনে এল। জানা যায়, কালো টেপ দিয়ে নম্বরপ্লেটের একটি সংখ্যা বদল করে স্কুটার চালাচ্ছিলেন তপসিয়ার এক যুবক। তাঁর স্কুটারের নম্বরপ্লেটের শেষ থেকে দ্বিতীয় সংখ্যাটি বদলে দেওয়াতেই জরিমানার যাবতীয় মেসেজ পৌঁছে যাচ্ছিল গরফার ওই বাসিন্দার কাছে। তাতেই এই বিভ্রাট। সঠিক নম্বর হদিশ করে ওই স্কুটারচালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিস। লালবাজার সূত্রে খবর, নম্বরপ্লেটের সংখ্যা ইচ্ছাকৃত বদলে দিয়ে গাড়ি চালানো আইনত অপরাধ। তাই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতের নাম আদনান আহমেদ। কী উদ্দেশে তিনি এই কাজ করেছেন, তদন্ত চলছে তা জানতে। নিছকই জরিমানা এড়ানো, নাকি বড়সড় কোনও অপরাধ চক্র এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। বাইকচুরি গ্যাংয়ের সঙ্গে অভিযুক্তের কোনও যোগসাজশ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও। 

    গত ৩০ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) শ্রীকান্ত জগন্নাথরাওয়ের কাছে ই-মেল মারফত একটি অভিযোগ জমা পড়ে। দু’চাকার যানের জরিমানা সংক্রান্ত অভিযোগ থাকায় তা সরাসরি চলে যায় ট্রাফিক বিভাগের পাবলিক গ্রিভান্স সেলে। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক অভিযোগকারী পেশায় ব্যবসায়ী। এলাকাতেই তাঁর দোকান রয়েছে। যাওয়া-আসা বলতে বাড়ি থেকে দোকান। তিনি পুলিসকে জানান, তাঁর বাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের শেষ চারটি সংখ্যা ৪৪৮৫। সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে একের পর এক ট্রাফিক বিধি লঙ্ঘনের কারণে জরিমানার মেসেজ আসছে তাঁর ফোনে। ধর্মতলা, হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখে সিগন্যাল অমান্য করার জন্য জরিমানার মেসেজ আসছে। কিন্তু এসব জায়গায় তিনি বহুদিন যাননি। 

    অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামেন পিজি সেলের অফিসার-ইন-চার্জ জয়ন্ত ভট্টাচার্য। অভিযোগকারীর জরিমানার মেসেজে যেসব জায়গার উল্লেখ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট দিনে সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, নম্বর অভিন্ন। কিন্তু অভিযোগকরীর বাইকের বদলে ঘটনাস্থলে রয়েছে একটি সাদা স্কুটার। সবক’টি লোকেশনের ফুটেজেই দেখা যায় সাদা স্কুটার। অভিন্ন রেজিস্ট্রেশন নম্বরে দু’টি যান কীভাবে চলছে? তা জানতে স্কুটারটি চিহ্নিত করে মালিককে তলব করা হয় লালবাজারে। পুলিসি জেরায় আদনান স্বীকার করেন, তাঁর গাড়ির শেষ চারটি নম্বর ৪৪৯৫। কালো টেপ দিয়ে ‘৯’-কে ‘৮’ করে দেন তিনি। অভিযুক্তকে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় স্কুটারটি।
  • Link to this news (বর্তমান)