• হুঁকো খান মা নিস্তারিণী, মানুষের বুকের ‘তাজা’ রক্ত নেন পাণ্ডুয়ায়
    বর্তমান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: হুগলিতে কালীপুজোর সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। কোথাও পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রানি রাসমণির কথা, কোথাও আছে রাজার পত্নীহত্যার ইতিহাস। আবার হুগলিতেই আছে সতীর বলয়োপপীঠ। হুগলির কালীপুজোর রীতিনীতিতে আছে নানা বিচিত্র ঘটনা। আছে দেবীর হুঁকো খাওয়ার গল্প। কালচক্র ঘুরতে ঘুরতে আধুনিক সময়ে এসে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু কার্তিকের অমাবস্যা এলেই অতীত অদ্ভুতভাবে আজও প্রকাশ্যে চলে আসে। কখনও জনশ্রুতির আদলে কখনও বা ঐতিহ্যের ধারাকথনে। 

    হুগলির শেওড়াফুলি স্টেশনের কাছেই আছে নিস্তারিণী কালীমন্দির। জনশ্রুতি, শেওড়াফুলির রাজা হরিশ্চন্দ্র তাঁর তিন স্ত্রীর মধ্যে বিবাদে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। একদিন তিনজনের বিবাদের জেরে ক্ষুব্ধ রাজা বড় রানিকে হত্যা করেন। কিন্তু তাঁর মন থেকে অনুতাপ যাচ্ছিল না। এরপর একদিন তিনি উদ্দেশ্যহীন যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। সেই সফরে আচমকা একদিন তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশে খুঁজে পান এক শিলাখণ্ড। তা  থেকে মূর্তি নির্মাণ এবং পুজোর সূচনা। ঘটনাটি ১২৩৪ বঙ্গাব্দের। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে দুই শতাব্দী। আজও পুজো চলছে প্রাচীন রীতি রেওয়াজ মেনে। দেবী এখানে নিস্তারদাত্রীর ভূমিকায় আছেন। তাই তাঁর নাম নিস্তারিণী। রাজা হরিশ্চন্দ্র তাঁর হাতেই রাজ্য পালনের ভার দিয়েছিলেন। তাই তিনি শাসনদণ্ডের প্রতিরূপ হিসেবে হাতে তরোয়াল ধরে থাকেন। এই দেবীকেই  পুজোয় হুঁকো খাওয়ানোর রীতি আছে। রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রানি রাসমণি একবার দেবী নিস্তারিণীকে প্রণাম করতে এসেছিলেন। সেই সময় স্বয়ং দেবী বালিকাবেশে তাঁকে মন্দিরের পথ দেখিয়ে এনেছিলেন। 

    হুগলির বলাগড়ের জিরাটের কালিয়াগড়ে আছে সুপ্রাচীন সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। মন্দিরস্থল দেবী সতীর বলয়োপপীঠ নামে পরিচিত। পুরাণ মতে, সতীর দেহত্যাগের পর বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেয়। সেই সময় যেখানে সতীর হাতের বালা পড়েছিল সেগুলি উপপীঠ। পাশাপাশি, যেখানে বলয় পড়েছিল তা বলয়োপপীঠ হিসেবে পরিচিত। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির সংস্কারের নথি পাওয়া যায়। সংস্কারের পর নতুন ফলকে মন্দিরকে ৬০০ বছরের প্রাচীন বলে উল্লেখ করা হয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের তদানীন্তন সদস্য কামাক্ষ্যাপদ চট্টোপাধ্যায় সেই সংস্কার কাজ করেছিলেন। মন্দিরের তত্ত্বাবধায়কদের বংশজ ছিলেন বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।

    স্বপ্নাদেশের পুজো আছে চন্দননগরের গোন্দলপাড়ার নীলকণ্ঠেশ্বরীর মন্দিরে। ১৩২০ সালের আষাঢ় মাসে ওই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। হুগলির পাণ্ডুয়ার মণ্ডলাইয়ের কালীপুজোতে এখনও মানুষের বুকের রক্ত উৎসর্গ করার প্রথা আছে। বলির বিকল্প হিসেবে সেই প্রথা চালু হয়েছিল। জনশ্রুতি, সম্রাট আকবরের আমলে চুঁচুড়ায় জাগ্রত দয়াময়ী কালীর পুজো শুরু হয়েছিল। মন্দিরে কষ্টিপাথরের দক্ষিণাকালী বিরাজমান। 

    আজ, হ্যাজাকের আলোর বদলে এলইডি জুড়েছে মন্দিরের চাতালে। ইতিহাসের পরত গাঢ় হয়েছে আর পল্লবিত হয়েছে জনশ্রুতি। পুজো মরশুমে রীতি আর রেওয়াজের সঙ্গে জনশ্রুতির পালেও বাতাস লাগে। 
  • Link to this news (বর্তমান)