কলকাতার গঙ্গা ভাঙন রুখতে আইআইটি খড়গপুরকে সমীক্ষার দায়িত্ব দিল বন্দর কর্তৃপক্ষ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
কল্যাণী থেকে ফলতা পর্যন্ত গঙ্গার ভাঙন নিয়ে চিন্তিত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। কল্যাণীর কাছে একটা অংশে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওদিকে ফলতার কাছে ভাঙন চিন্তায় রেখেছে বন্দরকে।
সে কারণে কলকাতার গঙ্গা ভাঙনে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবার এই দীর্ঘ পথে ভাঙনের কারণ বুঝতে আইআইটি খড়গপুরকে সমীক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণের টাকায় এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
সেক্ষেত্রে বন্দরের আধিকারিকরা মনে করছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নে ক্রমশ গঙ্গার জলস্ফীতি ঘটছে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। ফলে, প্রাকৃতিক নিয়মে কলকাতার আশপাশে গঙ্গার পাড় গড়ে উঠেছে। গঙ্গার পলিমাটি জমে তৈরি হয়েছে বাঁধ। অবশ্য সেই বাঁধ ততটা শক্তপোক্ত নয়। তাই ভাঙনের আশঙ্কা বেশি। যেহেতু এই অংশে প্রতিদিন জোয়ার–ভাটা হয়। তাই রোজ পাড় ভাঙছে। হঠাৎ করে যদি কোনও দিন গঙ্গায় জলস্ফীতি হয়, তা হলে পাড় ভেঙে কলকাতা শহরে জল ঢুকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
এ প্রসঙ্গে কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান রথীন্দ্র রমণ জানিয়েছেন, ‘বন্দরের সার্ভে টিম প্রতিনিয়ত নানা ভাবে তথ্য যোগাড় করে। কলকাতায় জোড়াবাগান ও বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙনের বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। আমরা সেখানে খড়গপুর আইআইটি’র সাহায্য নিচ্ছি। এছাড়া আমরা কল্যাণীর কাছে ভাঙন প্রতিরোধে একটা কাজ হাতে নিয়েছি। সেটা ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়ে যাবে।’
একদিকে কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে জনবহুল এলাকায় গঙ্গার ভাঙনে ছাদ হারিয়েছে একাধিক পরিবার। আবার জোড়াবাগান এলাকাতেও এই সমস্যা বারবার উঠে এসেছে। ভাঙনকে ঘিরে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় গঙ্গা বা হুগলি নদীর তীরে বারবার সমস্যা হয়েছে। এমনকী, গোডাউন বা বাড়ি জলের তলায় চলে যেতে পারে, এই ভয়ও তৈরি হয়েছে।
ওদিকে ভাঙনের মোকাবিলা এবং নদীর গতিপথ বদল নিয়ে যে কলকাতা বন্দরের সঙ্গে যৌথভাবেই কলকাতা পুরসভা কাজ করতে চায়, বহুবার এই প্রসঙ্গে কথা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, হুগলির ত্রিবেণী থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁওখালি পর্যন্ত প্রায় ১১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হুগলি নদীর পাড়ে ভাঙনের কারণ জানতে বিশদে সমীক্ষা হবে। গঙ্গার পাড় ভেঙে যে সব জায়গায় ভবিষ্যতে বন্যা হতে পারে, সেই এলাকাগুলি শনাক্ত করা হবে। হুগলি নদীর পাশাপাশি তার সংযোগকারী বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের অবস্থাও সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। এই সব এলাকায় সারা বছর আবহাওয়া কেমন থাকে, তার উপরও সমীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি গত ২৫ বছরের আবহাওয়ার রিপোর্টও বিশ্লেষণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে একাধিকবার বদলে গিয়েছে গঙ্গার গতিপথও। আগামীতে গঙ্গার গতিপথ যে বদল হবে না, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।