• দুর্যোগ কাটতেই সাগরপথে পাড়ি দেওয়া শুরু ট্রলারের
    এই সময় | ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়, কাকদ্বীপ: দুর্যোগ কাটিয়ে শনিবার বিকেলের পর ফের গভীর সমুদ্রে রওনা দিলেন সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা। অন্য দিকে, শনিবার দুপুর একটা থেকে সাগরের কচুবেড়িয়া এবং কাকদ্বীপের লট নম্বর আট ফেরিঘাটের মধ্যে মুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসেল পরিষেবা চালু করে দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে সুন্দরবনের সমস্ত ফেরি পরিষেবা চালু হয়ে গিয়েছে। সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপের ফেরিঘাটগুলিতে দিনভর মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে।আবহাওয়া দপ্তর থেকে ঘূর্ণিঝড় দানার পূর্বাভাস পেয়েই নদী এবং সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার উপর শনিবার পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মৎস্য দপ্তর। সেই মতো উপকূলের ঘাটে ফিরে এসেছিল সমস্ত ট্রলার। এ বার আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিল, শনিবার দুপুরের পর থেকেই জেলায় আবহাওয়ার উন্নতি হবে। ফলে সকাল থেকে উপকূল এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝিরঝিরে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই নামখানা মৎস্য বন্দরে নোঙর করে থাকা ট্রলারগুলি সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে। মাঝেমধ্যে মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে রোদের মুখও দেখা যাচ্ছিল। ফলে ট্রলারে তোলা হয় তেল এবং বরফ।

    দানার প্রভাবে বুধবার থেকে ঝোড়ো হওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে চাষবাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টিতে পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, মথুরাপুর, রায়দিঘির অধিকাংশ ধানজমি। জমা জলে মাঠেই লুটিয়ে পড়েছে ধান। মাথায় হাত কৃষকদের। আদৌ এ বছর মাঠ থেকে সোনালি শস্য ঘরে নিয়ে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে চাষিদের একাংশ।

    নামখানার বাসিন্দা প্রবোধ জানা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গত তিন দিন ধরে যে হারে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমাদের ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সমস্ত ধান গাছ মাঠে জমা জলের উপর শুয়ে পড়েছে। এখন সবে ধানের শিস বেরোনো শুরু হয়েছিল। যা পরিস্থিতি দ্রুত জল না নামলে এ ভাবে ধান গাছ জলে পড়ে থাকলে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

    ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা চাইছেন, রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণের বিষয়টি যদি সহানুভূতির সঙ্গে দেখেন, তবে উপকার হয়। তবে জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে খবর, জেলায় নানা জাতের ধানের চাষ হয় এখানে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে খেতের জলে ধান গাছ নুয়ে পড়লেও অনেকটাই উদ্ধার করা যাবে।

    এ বারের অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে কাকদ্বীপ মহকুমার প্রায় সাড়ে ৯৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানার জন্য ইতিমধ্যেই ব্লকস্তরে প্রতিনিধিদল তৈরি করা হয়েছে। তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দেবজ্যোতি মহলানবীশ বলেন, ‘প্রতি বছরই কৃষি দপ্তর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতা করে। এ বারও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলা শস্যবিমা যোজনার মাধ্যমে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

    প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই কৃষকদের মধ্যে ফর্ম বিলি শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষকদের সহযোগিতার জন্য বিমার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার মেয়াদ এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
  • Link to this news (এই সময়)