অরুণাচল প্রদেশের গোরিচেন শৃঙ্গ জয় বসন্ত সিংহরায়দের
এই সময় | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
গৌতম ধোনি, কৃষ্ণনগর
ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান হিসেবে অরুণাচল প্রদেশের গোরিচেন পর্বতশৃঙ্গ (৬,৫৩০ মিটার) জয় করলেন কৃষ্ণনগরের পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায় ও তাঁর ক্লাবের ৪ অভিযাত্রী।
বসন্তের নেতৃত্বে মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগরের (ম্যাক) টিম এই অভিযান করে। টিমে ছিলেন রুম্পা দাস, প্রশান্ত সিংহ, সুব্রত ঘোষ এবং পার্থসারথি লায়েক।বেস ক্যাম্প থেকে নেমে রবিবার বিকেলে জঙ-এ এসে বসন্ত ফোনে ‘এই সময়’কে বলেন, ‘এর আগে ভারতীয় সেনার টিম এবং দিরাং-এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যালায়েড স্পোর্টস (NIMAS) টিম সামিট করেছিল। সিভিলিয়ান হিসেবে আমরাই প্রথম জয় পেলাম। কিন্তু খুব সহজে জয় আসেনি। পর্বতশৃঙ্গের কাছে একদমই শার্প রিজ। সামিট ক্যাম্প থেকে শৃঙ্গ পর্যন্ত প্রায় ১০০০ মিটার পথে রোপ ফিক্স করতে হয়েছিল। সামিটের আগে সেই রোপ খুলে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছিল। সামিট প্লেসে আবার তিন-চার জন একসঙ্গে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। দুই শেরপাকে নিয়ে আমরা ক্লাবের ৫ জন দু’দলে ভাগ হয়ে আগে পরে সামিট করি।’
এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ বহু দুরূহ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন বছর ৬৪-র যুবক বসন্ত। কিন্তু পূর্ব হিমালয়ের এই শৃঙ্গে এত পরে অভিযান কেন? বসন্ত বলেন, ‘দেশের মধ্যে হলেও এই পর্বতশৃঙ্গ ইন্দো-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত বলে আর্মি কন্ট্রোলে থাকায় আগে এখানে অভিযান করার অনুমতিই মিলতো না। ইদানীং মিলছে। অনুমতি পেয়ে গত বছরও চেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্ত ক্যাম্প-ওয়ান থেকে আরও কিছুটা এগিয়ে আর পথ খুঁজে না পেয়ে শেষপর্যন্ত ফিরতে হয়েছিল আমাদের।’
অভিযানের বর্ণনা দিতে গিয়ে বসন্ত বলেন, ‘১০ অক্টোবর আমরা মগো গ্রামে পৌঁছেছিলাম। দু’দিন সেখানে থাকার পর ১২ এবং ১৩ তারিখে জিথাং এবং মেরাথাংয়ে দুটো ট্রানজিট ক্যাম্প করে ১৪ অক্টোবর আমরা বেস ক্যাম্পে পৌঁছই। এরপর ১৯ অক্টোবর এক নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছতে পারি। পরের দিন পৌঁছই সামিট ক্যাম্পে। ২০ অক্টোবর রাত একটায় আমরা সেখান থেকে শৃঙ্গ জয়ের উদ্দেশে রওনা দিই। টানা ৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে ২১ অক্টোবর সকাল ৬.২৫ মিনিটে আমরা দু’জন শৃঙ্গ ছুঁতে সমর্থ হই। সামিটের জায়গায় এক সঙ্গে তিন জনের বেশি দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না বলে দু’দলে ভাগ হয়ে যাই আমরা। দু’জন শেরপাকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের পাঁচ জন দু’ধাপে শৃঙ্গ জয় করি।’
অভিযানের পদে পদে ঝুঁকি। সে প্রসঙ্গে বসন্ত বলেন, ‘এক নম্বর ক্যাম্প থেকে সামিট ক্যাম্প পর্যন্ত ৪০০ মিটার দূরত্বে রকের ওপর রোপ ফিক্স করতে পেরেছিলাম। আর সামিট ক্যাম্প থেকে শেষ ধাপ পর্যন্ত প্রায় ১০০০ মিটার দূরত্বে হার্ড স্নো-র ওপরে। একদম শার্প রিজ। সামিটের আগে ফিক্স করা রোপ খুলে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছিল।’
ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের ইস্ট জ়োনের চেয়ারম্যান দেবরাজ দত্ত বলেন, ‘তেলঙ্গনার এক যুবক সেপ্টেম্বরে ওই শৃঙ্গ জয় করলেও তিনি একটি কমার্শিয়াল কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিভিলিয়ান টিম হিসেবে ওই শৃঙ্গ প্রথম জয় করলেন মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগরের এই পাঁচ অভিযাত্রী।’
এ বারের পুজোয় ঢাকের বাজনা একদমই শোনা হয়নি বসন্ত, রুম্পা, প্রশান্ত, সুব্রত, পার্থ-দের। রুম্পা বলেন, ‘অভিযানের ঢাকে কাঠি পড়লেই আমাদের মনে হয় দুর্গাপুজোর বাজনা বাজতে শুরু করেছে। এ বার ফেরার পালা।’ ২৯ অক্টোবর কৃষ্ণনগরে ফিরবেন বসন্ত অ্যান্ড টিম!