• আন্দোলনের অপমৃত্যু! শুভেন্দুর অভিযোগের পাল্টা ডাক্তারদের
    এই সময় | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে বামেরা বিপথে চালিত করছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সপ্তাহখানেক আগে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে জুনিয়র ডাক্তাররা আপাতত তাঁদের আন্দোলনের একটি পর্বে ইতি টেনেছেন। এরপরে রবিবার আবার শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করলেন, বাম ও অতিবামেরা এই ভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। শুভেন্দুর দাবি, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে বাদ দিয়ে সরকার বিরোধী কোনও আন্দোলন সফল হতে পারেন না।অমিত শাহের সফরের মধ্যে রবিবার সকালে নিউ টাউনে সুকান্তর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে একযোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মান-কি-বাত শোনেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু-সুকান্তরা মনে করছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সূচনা ইতিবাচক হলেও তার শেষ-পর্ব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

    শুভেন্দুর কথায়, ‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের ভোট পেয়েছে। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে ২ কোটি ২৮ লক্ষ এবং শেষ লোকসভা নির্বাচনে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ ২৭ হাজার মানুষের ভোট পাওয়া দল হলো বিজেপি। তাকে (বিজেপি) এবং তাদের ভোটার সমর্থকদের বাদ দিয়ে কোনও সরকার বিরোধী আন্দোলন সফল হতে পারে না। তাই বাম এবং অতিবামেরা এই আন্দোলনের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে।’

    আরজি কর ইস্যু নিয়ে ছাত্র সমাজের ব্যানারে গেরুয়া শিবির যে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল, সেই কর্মসূচিতে জুনিয়র ডাক্তাররা যোগ না দিয়ে প্রথম ভুল করেছিলেন শুভেন্দুর পর্যবেক্ষণ। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে গিয়ে সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গো-ব্যাক স্লোগান শুনেছিলেন। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান চলার সময়ে অগ্নিমিত্রা পলকেও একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। বাম-অতিবামেরা এই কাজ করেছিল বলে শুভেন্দুর অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠককেও মানুষ ভালো চোখে দেখেননি বলে শুভেন্দুর দাবি।

    শুভেন্দুর এই মন্তব্য নিয়ে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের নেতা আসফাকুল্লা নাইয়া বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের সাফল্য অথবা ব্যর্থতা আমরা মনে করি নির্যাতিতার জন্য বিচারের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা ময়দান ছাড়িনি। যতদিন না ন্যায়বিচার পাচ্ছি, আন্দোলনে চলবে।’ জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের আর এক মুখ দেবাশিস হালদারের কথায়, ‘আমরা কোনও দলীয় জ্ঞান শুনতে চাই না। আন্দোলনের চাপেই বৈঠকে বসতে মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন।’

    জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের সঙ্গে অবশ্য পুরোপুরি সহমত নয় সদ্য তৈরি হওয়া জুনিয়র ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সংগঠনের নেতা শ্রীশ চক্রবর্তী বলেন, ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের আন্দোলন সঠিক পথে হচ্ছিল না বলেই আমরা সংগঠিত হয়েছি।’ তৃণমূলও মনে করছে, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে বামেরা বিপথে চালিত করেছে। দলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘বিরোধী দলনেতার বক্তব্যকে আংশিক সমর্থন করছি। আমরাও গোড়া থেকে বলেছি, জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশকে বাম ও অতিবামেরা ভুল পথে চালিত করেছে।’

    তবে কুণাল এ-ও মনে করছেন, ডাক্তারদের আন্দোলনের মঞ্চের দখলদারি নিয়ে বাম ও বিজেপি লড়াই চালাচ্ছে। যদিও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘ডাক্তাররা কী ভাবে আন্দোলন করবেন তা ডাক্তাররা ঠিক করবেন। শুভেন্দু তো মুখোশ পরে নবান্ন অভিযান করলেন, তারপর কী হলো? এই আন্দোলনে বিজেপি কোথায়? সিবিআই বা কী করছে? আসলে রাজ্যের শাসকের পাশেই রয়েছে দিল্লি।’ এই বিতর্কের মধ্যে এ দিন নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে শহরে আবার মিছিল করেছে প্রতিবাদীরা।
  • Link to this news (এই সময়)