এই সময়, কলকাতা ও পেট্রাপোল: বিধানসভা ভোটের এখনও ঢের দেরি। কিন্তু রবিবার বাংলায় কার্যত বিধানসভা ভোটের প্রচারই করে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী বিধানসভা ভোটে বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদলের ডাক দিয়ে শাহ ঘোষণা করে গেলেন, ২০২৬-এ ক্ষমতায় এলে বাংলায় বিজেপি কী কী কাজ করবে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের কথা বারবার বললেও আগামী মাসে রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে টুঁ শব্দটিও করলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এমনকী, এ বারের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির আসন কী ভাবে ১৮ থেকে কমে ১২-তে চলে এল, তা নিয়েও উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি শাহকে, যা অপ্রত্যাশিত বলেই মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা।তাঁরা আশা করেছিলেন, লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর্যালোচনা এবং আসন্ন উপনির্বাচনের উপরেই ফোকাস করবেন করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু সে পথে না হেঁটে তিনি এখনই কার্যত দু’বছর বাদের বিধানসভা ভোটের দামামা বাজানোর চেষ্টা করলেন। শাহের দাবি, ২০২৬-এ বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের ঢল নামবে। গরিব মানুষ আয়ুষ্মান ভারত পাবেন। এবং সর্বোপরি দুর্নীতি বন্ধ হবে। জবাবে শাহকে ‘রাজনৈতিক পর্যটক’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। রাজ্যসভায় দলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘২০২৬-এও এক গল্প! ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগেও দেখেছি। ২০২৪ লোকসভার ভোটেও দেখেছি। প্রতি বারই তৃণমূলের বিজয় পতাকা উড়েছে। উনি অনেক কিছুই বলতে পারেন, কিন্তু তার কোনও রাজনৈতিক প্রভাব বাংলায় নেই। কারণ, উনি রাজনৈতিক পর্যটক।’
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় কার্যত ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। এ বছর লোকসভা ভোটের প্রচারেও একাধিক বার বাংলায় জনসভা করে গিয়েছেন তাঁরা। সেই সভাগুলি থেকে তাঁরা মূলত যে ইস্যুগুলিতে তৃণমূলকে বিঁধতেন, এ দিন যেন তাঁরই পুনরাবৃত্তি শোনা শাহের গলায়। তিনি বলেন, ‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অন্যায় হচ্ছে। আমি বাংলার শ্রমিকদের আশ্বস্ত করছি, আপনারা ২০২৬-এ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনুন, প্রাপ্য বকেয়া টাকা আপনাদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। ২০২৬-এর পর মনরেগার টাকা কোনও পার্টির ফান্ডে আর যাবে না। একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে তৃণমূল সরকার ব্যাপক দুর্নীতি করেছে।’ জবাবে কুণালের কটাক্ষ, ‘বিজেপির বিরুদ্ধেই সব থেকে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। আবাসের টাকা দিচ্ছে না। অভিষেক বন্দ্যপাধ্যায় শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি করেছিলেন। তার কী হলো!’
২০২৬-এ বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে বলেও দাবি করেছেন শাহ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বনগাঁর পেট্রাপোল স্থলবন্দরে আধুনিক যাত্রী পরিষেবার জন্য নতুন টার্মিনাল এবং বাণিজ্য ব্যবস্থার আরও উন্নতিতে মৈত্রী-দ্বার উদ্বোধন করতে রবিবার পেট্রাপোল বন্দরে গিয়েছিলেন শাহ। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলার মানুষকে একটা কথাই বলতে চাই, ২০২৬-এ পরিবর্তন করে দিন, অনুপ্রবেশ আমরা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবো। অনুপ্রবেশ বন্ধ হলে তবেই বাংলায় শান্তি ফিরবে।’
একই দাবি এ দিন সল্টেলেকের ইজে়ডসিসিতেও করেছেন শাহ। বিজেপির একাংশের দাবি, অতীতে বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের আগেও একই সুরে অনুপ্রবেশ বন্ধের দাবি করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তৃণমূল অবশ্য মনে করছে, অনুপ্রবেশের কথা বলে অমিত শাহ সেমসাইড গোল খেয়েছেন। কুণালের কথায়, ‘সীমান্ত রক্ষা করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। সেটা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলেন, অনুপ্রবেশ সমস্যা রয়েছে, তা হলে ওঁর নিজেরই আত্মসমালোচনা করা উচিত। এটা সেমসাইড গোল।’