আশাই সার, আরজি করে নির্যাতিতার মা-বাবা পেলেন না শাহের দেখা
এই সময় | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
মণিপুস্পক সেনগুপ্ত
প্রত্যাশা পূরণ হলো না আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারের। পূরণ হলো না বঙ্গ-বিজেপির প্রত্যাশাও। বাংলায় এসেও আরজি কর ইস্যু নিয়ে তেমন কোনও উৎসাহই দেখালেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার সরকারি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচির ফাঁকে নির্যাতিতার পরিবারকে দেখা করার সময় দিলেন না তিনি। দলীয় সভাতেও শাহের মুখে আরজি কর প্রসঙ্গ শোনা গেল মাত্র একবার! তাও নিতান্ত দায়সারা ভাবেই, এমনটাই মত বঙ্গ-বিজেপি নেতাদের একাংশের। বরং ঠারেঠোরে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের শাহ এই বার্তাই দিলেন যে, আরজি কর নয়, অনুপ্রবেশের মতো চেনা অস্ত্রগুলিতেই আরও শান দিন তাঁরা।আরজি করের নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন শাহকে। চিঠিতে নির্যাতিতার বাবা লিখেছিলেন, ‘কিছু বিষয়ে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আপনি যখন যেখানে সময় দেবেন, আমরা তখন সেখানে গিয়েই দেখা করব।’ বঙ্গ-বিজেপির নেতারাও চেয়েছিলেন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে শাহের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে আরজি কর ইস্যুতে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখতে। রবিবার শাহ রাজ্যে আসায় সেই সাক্ষাৎ হতে পারে বলে আশায় ছিলেন অনেকেই। তবে সে সব কিছুই হলো না। পদ্ম-নেতাদের যাঁরা ভেবেছিলেন, আরজি ইস্যুতে রাজ্যকে বিঁধবেন শাহ— সেই আশাতেও কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই।
এ দিন সল্টলেকের ইজে়ডসিসি প্রেক্ষাগৃহে বিজেপির ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ কর্মসূচিতে অংশ নেন শাহ। সেখানে তাঁর বক্তৃতায় বারবার ঘুরেফিরে আসে ২০২৬-এ বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে কী কী কাজ করবে তার ফিরিস্তি। সেই সুবাদে উঠে আসে অনুপ্রবেশের মতো বিজেপির সিলেবাসে থাকা চেনা ইস্যুগুলি। কিন্তু দীর্ঘ আধঘণ্টার বক্তৃতায় মাত্র একবারই শাহের মুখে শোনা গেল আরজি কর প্রসঙ্গ। সঙ্গে জুড়ে দিলেন সন্দেশখালিও।
শাহের বার্তা, ‘সন্দেশখালি, আরজি করের মতো ঘটনাগুলি বন্ধ করতে ২০২৬-এ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনুন।’ শীর্ষ নেতার মুখে আরজি করের কথা শুনে হাততালি দিয়ে ওঠেন সভায় হাজির বিজেপি নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ওই একবারই! শাহের এ দিনের ভাষণে আর ফিরে আসেনি আরজি কর প্রসঙ্গ। তাতে যারপরনাই হতাশ বঙ্গ-বিজেপির একাংশ। উত্তরবঙ্গের এক বিজেপি বিধায়কের কথায়, ‘আরজি কর এত বড় ইস্যু। অথচ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কলকাতায় এসে তা নিয়ে সেরকম কিছুই বললেন না। তা হলে আমরা কি লড়াই থেকে সরে গিয়েছি! কেন্দ্রীয় নেতাদের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
বঙ্গ-বিজেপির কিছুটা মুখরক্ষা হতো যদি নির্যাতিতার পরিবারের ডাকে এ দিন সাড়া দিতেন শাহ। সূত্রের খবর, তার জন্য বিস্তর কাঠখড়ও পুড়িয়েছিলেন বাংলার কয়েকজন বিজেপি নেতা। কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার সজল ঘোষ কিছুদিন আগে শাহকে লেখা নির্যাতিতার বাবার চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। বঙ্গ-বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পলও ব্যক্তিগত ভাবে একই আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আরজি করকে ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’-এ রাখলেন না শাহ।
রাজ্য বিজেপির এক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, ‘বাংলায় একটা পেটো ফাটলেও এই অমিত শাহরা গেল গেল রব তুলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে দিতেন। অথচ আরজি কর ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। কলকাতায় এসেও নির্যাতিতার বাবা-মা’র সঙ্গেও দেখা করলেন না। এরপর কোন মুখে আমরা বলব, বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। উনি রাজ্য সফরে এসে আমাদের মনোবল বাড়ালেন না, বরং তৃণমূলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে গেলেন।’
শাহের দেওয়া সেই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করতে দেরি করেনি রাজ্য শাসকদল। রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, ‘অমিত শাহের উচিত ছিল আরজি করের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা। কিন্তু উনি দেখা করলেন না। এটা অমানবিক। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।’ তাঁর খোঁচা, ‘এরপর বিজেপির আর কোনও অধিকার থাকল না আরজি কর নিয়ে কথা বলার।’ যদিও রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘এটা আমাদের দলের বিষয় নয়। শুনেছি নির্যাতিতার পরিবার ওঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিষয়। আমরা কী আর বলতে পারি? তবে সিবিআই তদন্ত করছে। ব্যাপারটা বিচারাধীন। নির্যাতিতার পরিবারের আবেগকেও উনি সম্মান করেন।’