সংবাদদাতা, আরামবাগ: আরামবাগ শহরের মধ্যে প্রাচীন রীতি ও নীতি অনুসরণ করে বহু কালীপুজো হয়। তাদের মধ্যে প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ কালীপুজো হল শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাড়েরঘাট শ্মশান কালীর পুজো। এই কালী মা এতটাই জাগ্রত যে, আরামবাগ বাদেও পাশ্ববর্তী গ্রামের মানুষজন মায়ের কাছে পুজো করতে আসেন। কথিত আছে, সকলের মনস্কামনা পূরণ করেন পাড়েরঘাট শ্মশান কালী মা। এই কালীপুজোকে ঘিরে সকলের মধ্যেই একটা আলাদা আবেগ কাজ করে। কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় ১৩০ বছর বা তারও বেশি পূর্বে আরামবাগ শহর একটি প্রত্যন্ত গ্রাম ছিল। তখন আরামবাগের মধ্যে এটিই একমাত্র বড় শ্মশান ছিল। সেই সময় করুণা হাঁড়ি নামে এক ভিক্ষুক হাতে ত্রিশুল এবং মাথায় বিশাল জটা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করতেন। একদিন তিনি মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তাঁকে মা বলেছিলেন, আমায় এই শ্মশান প্রতিষ্ঠা করে পুজো করলে সবার মনস্কামনা পূরণ হবে। তারপর তিনি এই মন্দিরে কালী মায়ের মূর্তি বানিয়ে পুজো করেন। প্রথমের দিকে একটি আট চালায় এই পুজো সম্পন্ন করা হত। বর্তমানে এই শ্মশানের কমিটি তৈরি করে মন্দির বানানো হয়েছে। এই পুজোর বর্তমান প্রধান পুরোহিত তুষার চক্রবর্তী বলেন, এখানে মা দক্ষীণা কালীকা রূপে পূজিত হন। কালীপুজোর আগের দিন ব্যাঙ্কের লকার থেকে মায়ের সোনার জিভ, সোনার চোখ, সতিহার, কানের, নথ, টিকলি, নপুর বের করে মাকে সাজানো হয়। পুজোরদিন বিকেল থেকেই শহরের হাজার অধিক মহিলা পুজোর ডালি নিয়ে এই মন্দিরে লাইন দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেন। স্থানীয় দ্বারকেশ্বর নদ থেকে ঘট তুলে অমাবস্যা থাকাকালীন এই কালীমায়ের পুজো শুরু হয়। সংকল্প হওয়ার পর প্রায় ৪ হাজার মানুষকে খিচুরি ভোগ খাওয়ানো হয়। মহানিশিতে বিশেষ করে মায়ের কাছে ষোলমাছ পোড়া নিবেদন করা হয়। পড়ে ছাগ বলি, আঁখ বলি, ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। জনশ্রুতি, এই মা ভীষণ জাগ্রত। মানত করলে সকলেরই মনস্কামনা পূরণ করেন। তাই বহু পুরুষ ও মহিলা স্থানীয় দ্বারকেশ্বর নদে স্নান সেরে কেউ দণ্ডি কাটতে কাটতে নদী থেকে মন্দিরে গিয়ে কালীমায়ের পুজো দেন। আবার কেউ হাত কেটে রক্তও বের করেন। তাঁদের বিশ্বাস, মায়ের কাছে ভক্তি ও নিষ্ঠার সাথে প্রার্থনা করলে মা তাঁদের মনস্কামনা পূরণ অবশ্যই করেন। তাই বহু দূর থেকে এসেও এই মায়ের পুজো দেন মানুষজন। পুজো হয় একদিনের। কিন্তু প্রতিমার বিসর্জন হয় একবছর পরে। অর্থাৎ প্রতিবছর দুর্গা ঠাকুরের বিসর্জনের পর নিয়ম মেনে এই কালী মায়ের বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে প্রতিদিন চলে নিত্যপুজো। প্রতিদিন বিকালে মায়ের ভজন পাঠ এবং কথাঅমৃত পাঠ করা হয়। মাসে একবার কামারপুকুর মঠ থেকে সন্ন্যাসীরা আসেন এবং বানী প্রচার করেন। এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্মশান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৪২ বছর আগে কমিটিও গঠন করা হয়। বর্তমানে এই পাড়েরঘাট মহাশ্মশান সমিতির সভাপতি প্রদীপ সিংহরায় বলেন, আগের থেকে বর্তমানে এই শশ্মানের আমুল সংস্কার হয়েছে। উন্নয়ন হয়েছে। শ্মশানের চারিদিকে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। পুরো শ্মশানটিকে আলোর মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আমাদের পুজোয় সকল আরামবাগ মহকুমাবাসীকে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি। -নিজস্ব চিত্র