নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ফের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গেল একটি তরতাজা প্রাণ। বেপরোয়া লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল মহিলার। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিপুর থেকে নৃসিংহপুর যাওয়ার কালনা রোডে। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ এবং রাস্তা অবরোধকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে ওই এলাকা। উত্তপ্ত সেই পরিস্থিতি সামলাতে পুলিস এলে, তাদের সঙ্গেও তুমুল বচসা বাধে সাধারণ মানুষের।
জানা গিয়েছে, মৃতার নাম দীপা মণ্ডল। মধ্যবয়স্ক ওই গৃহবধূ স্বামী সুরজিৎ মণ্ডলকে কর্মক্ষেত্রে খাবার দিতে যাচ্ছিলেন। নৃসিংপুরের বড়ডাঙা এলাকার বাসিন্দা তিনি। বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্রতিদিনই স্বামীকে খাবার পৌঁছে দিতেন। কিন্তু এদিনই যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হল তাঁকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঘটনাটি ঘটেছে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। রাস্তার এক ধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন দীপা। সেই সময় একটি দশ চাকার লরি নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ছুটে আসে এবং সজোরে ধাক্কা মারে ওই মহিলাকে। এর ফলে ওই মহিলা রাস্তায় পড়ে যান। তখন গাড়ি থামানোর বদলে লরিটি তাঁকে পিষে দিয়ে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই দৃশ্য দেখার পর উত্তেজিত হয়ে যান স্থানীয়রা। তাঁরা কালনা রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। অনেকেই বসে পড়েন মাঝ রাস্তায়। দুর্ঘটনা এবং রাস্তা অবরোধের খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শান্তিপুর থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। প্রথমে তাঁরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বারবার ওই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে কেন, পুলিসকে উদ্দেশ্য করে পাল্টা এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদীদের দাবি, রাস্তার দু’ধারে অনেক বাড়ি রয়েছে। তবুও মাঝেমধ্যেই সেই রাস্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যাতায়াত করে লরি এবং অন্যান্য মালবাহী গাড়ি। অনেক সময় এলাকার শিশুরাও রাস্তার ধারে খেলাধুলো করে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায় সেখানেও। সাম্প্রতিক অতীতে এরকম একাধিক দুর্ঘটনার কথা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তাঁরা। এরকমই একাধিক পাল্টা দাবি তুলে ধরতে শুরু করেন স্থানীয়রা। সেই সময় পুলিসের সঙ্গে বচসা বেধে যায় তাঁদের। অবরোধকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কালনা রোড। কিন্তু পরে পুলিসের লাগাতার অনুরোধে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর মৃতদেহটি রানাঘাট পুলিস মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় শান্তিপুর থানার পুলিস। ঘটনার তদন্তে নেমে ঘাতক লরিটিকে আটক করে শান্তিপুর থানার পুলিস। গোটা ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত মানুষের ভিড়। নিজস্ব চিত্র