সংবাদদাতা, করিমপুর: সাম্প্রতিক কালের থিম আর আলোয় সাজানো কালীপুজোর মধ্যে আজও জনপ্রিয় সীমান্তের কালীপুজো। মুরুটিয়ার ফুনকাতলার এই পুজোকে ঘিরে এলাকার মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। ৬৭ বছর আগে এক বাসকর্মী যে কালীপুজো শুরু করেছিলেন, সেই পুজোই আজ এলাকার সর্বজনীন পুজো হয়ে উঠেছে। পুজোর ক’দিন দীপাবলির আলোয় মুছে যায় সীমান্তের অন্ধকার। আলোয় সেজে ওঠে স্থানীয় বাড়ি, রাস্তা ও পুজোমণ্ডপ। ফুনকোতলার শ্যামা মায়ের পুজোর টানে এলাকার মানুষ তো বটেই, বহু দূর দুরান্তের মানুষও এসে হাজির হন স্থানীয় আত্মীয়দের বাড়িতে। এই ‘শ্যামা মা পুজো কমিটি’র সম্পাদক অমিয় মণ্ডল জানান, আজ থেকে সাতষট্টি বছর আগে একজন বাসকর্মী এই পুজো শুরু করেছিলেন। সেই সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই এলাকা বনজঙ্গলে ভরা ছিল। তখন কৃষ্ণনগর থেকে শিকারপুর-করিমপুর রুটে হাতেগোনা কয়েকটি বাস চলাচল করত। এক কালীপুজোর দিন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ও বাসের চালক বেণীমাধব মিত্র বাস নিয়ে এখানে এসেছিলেন। সেদিন তাঁর নিজের বাড়িতেও পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই রাতে ছুটি না পেয়ে তাঁকে ফুনকোতলায় থেকে যেতে হয়। বাড়িতে যেতে না পেরে রাত কাটাতে অগত্যা তিনি বাসেই ঘুমোতে যান। মাঝরাতে স্বপ্নে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি স্বপ্নাদেশ পান, তাঁকে ফুনকোতলাতেই কালীপুজোর ব্যবস্থা করতে হবে। সময় নষ্ট না করে বেণীমাধববাবু সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে সেই রাতেই কোনওরকমে পুজোর ব্যবস্থা করেন।
কমিটির সদস্য সুজয় স্বর্ণকার জানান, পুজোকে ঘিরে মাঠে এগারো দিনের মেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। মন্দিরের সামনের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাউল, নৃত্যানুষ্ঠান ও যাত্রাপালা। মেলায় নাগরদোলার সঙ্গে মনোহারী সামগ্রী, বাসনপত্র বা খাবারের দোকান মিলিয়ে প্রায় তিনশো দোকান বসে। পুরনো রীতি মেনে এখনও নারকেল ও চিনি দিয়ে তৈরি হয় পুজোর প্রসাদ। প্রায় দশ হাজার হাঁড়িতে প্রসাদ তৈরি হয়। আরতির পর প্রতিদিন ৬০ কেজি ফল বিতরণ করা হয় দর্শনার্থীদের। রাতে খাওয়ানো হয় খিচুড়ি। জনপ্রিয় এই পুজোর সময় বাইরে কর্মক্ষেত্র থেকে এলাকার সকলেই ঘরে ফেরার চেষ্টা করেন। আত্মীয় পরিজনে ভরে যায় এলাকার প্রতিটি বাড়ি।
এছাড়াও অপর একটি জনপ্রিয় কালীপুজো হয় করিমপুর কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কের উপর বাথানপাড়ার জোংড়াদহ কালী মন্দিরে। এই পুজো এবছর ৪৪ বছরে পড়ল। কমিটির এক সদস্য জানান, রাজ্য সড়কের এই জায়গায় দুর্ঘটনা লেগেই থাকত। ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে দ্রুতগতির একটি বাস উল্টে আটজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। সেই বছর থেকেই এই কালীপুজো শুরু হয়। প্রথম দশ বছর টালির ছাউনি দেওয়া মন্দিরে পুজো হলেও ৩৫ বছর আগে থেকে পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। এখানেও পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে।