সমীক্ষা হবে শুনেই পাকা বাড়ি ছেড়ে পাটকাঠির ঘরে বসবাস
বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: আবাস যোজনার সমীক্ষায় নিজেদের যোগ্য প্রাপক হিসাবে প্রমাণ করতে ‘সাজানো বাগান’এর আশ্রয় নিচ্ছেন বহু উপভোক্তা। যদিও সেই সাজানো বাগান এক ঝলক দেখলেই বোঝা যায়, তা বসবাসের অযোগ্য। পাটকাঠি আর টিন দিয়ে ঘেরা ঘর। সঙ্গে খড়ের ছাউনি। ভাঙাচোরা খাটিয়া পাতা রয়েছে ঘরের এক কোণে। খাওয়া দাওয়া করার কিছু বাসন সামগ্রীও সাজানো রয়েছে নির্দিষ্ট জায়গায়। অথচ উনুন নেই। সেই ঘরেই থাকেন বয়স্ক উপভোক্তা। সেই কাঁচা ঘরের পাশেই রয়েছে দোতলা পাকা বাড়ি। হাঁড়ি আলাদা হওয়ার পর থেকেই নাকি রোদ, ঝড়, জল, বৃষ্টি উপেক্ষা করে বয়স্ক ব্যক্তি সেই কাঁচা ঘরেই থাকেন। আবাস যোজনার সমীক্ষা তালিকাতেও তাঁর নাম রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সার্ভের কাজের জন্য সরকারি কর্মীরা তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন। তখন তিনি জানান, ছেলে নাকি তাঁকে খেতে দেয় না। তাই পাকা বাড়ি ছেড়ে তিনি কাঁচা বাড়িতেই বসবাস করছেন। কথা না বাড়িয়ে প্রতিনিধিরা সেই উপভোক্তাকে বিভিন্ন নথিপত্র দেখাতে বলছেন। নথি আনতে গিয়ে সেই উপভোক্তা সটান ঢুকে যাচ্ছেন সেই পাকা বাড়িতেই। এমনকী জব কার্ডেও উপভোক্তার সঙ্গে তাঁর ছেলের নাম যুক্ত রয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত ফন্দিফিকির করেও বাড়ি পাওয়ার যোগ্য প্রাপক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন উপভোক্তা। এমনকী নিজেকে যোগ্য প্রাপক প্রমাণ করতে গোয়ালঘরকেও নিজের স্থায়ী ঘর বলে দাবি করছেন অনেকে। নদীয়া জেলাজুড়ে সমীক্ষা করতে গিয়ে এমন নানা অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রতিনিধিদের।
আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ হতে চলল। এখনও পর্যন্ত এক লক্ষের বেশি উপভোক্তার বাড়ি গিয়ে সার্ভে করে এসেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সমীক্ষার কাজে আরও স্বচ্ছতা আনতে জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরে মোট ২৩টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যেখান থেকে উপভোক্তাদের ফোন করা হচ্ছে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, সমীক্ষার কাজ ঠিকঠাক হয়েছে কি না। এখনও পর্যন্ত মোট ৫৮ হাজার ফোন কল করা হয়েছে। তাঁদের কোনও অভিযোগ থাকলেও তা নথিভুক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপভোক্তার সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডিং রাখা হচ্ছে। একটি পোর্টাল খুলে তাতে সেই তথ্য আপলোড করা হচ্ছে। নদীয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুনরায় সমীক্ষার কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সমীক্ষার কাজে গতি আনতে সার্ভে টিমের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে।
নদীয়া জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক অনুপকুমার দত্ত বলেন, ‘জোর কদমে চলছে আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ। প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন স্তরে কন্ট্রোল রুম খুলেও উপভোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’নদীয়ায় মোট ১ লক্ষ ৮১ হাজার উপভোক্তার তালিকা তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৯৮ হাজার ৭২৬ জন উপভোক্তার বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে। জেলায় প্রতিদিন গড়ে ১১ হাজার ৭৪৫ জন উপভোক্তার বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করা হচ্ছে। তার জন্য আগেই ৫৮৮টি দল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই দলের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬১৩টি করা হয়েছে। কারণ সমীক্ষার শুরু থেকেই নানা বাধা আসছে। কখনও অ্যাপের সমস্যা, আবার কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার ফলে সমীক্ষার কাজের গতি শ্লথ হচ্ছে। নদীয়া জেলায় তেহট্ট-২ ব্লকে সর্বোচ্চ ৫৩ শতাংশ উপভোক্তার সমীক্ষার কাজ হয়ে গিয়েছে। চলছে সমীক্ষার কাজ। নিজস্ব চিত্র