নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: রবিবার রাজ্যে এসে ২০২৬ সালে বাংলায় ‘আচ্ছে দিন’ আনার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মুষড়ে পড়া দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতেই তিনি এই টোটকা দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত। তিনি যখন আচ্ছে দিনের গল্প শোনাচ্ছিলেন, সেই সময় ধস নামল পূর্ব বর্ধমানের বিজেপিতে। লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের অন্যতম সঙ্গী ছিলেন শ্যামল রায়। দল আগে তাঁকে বহিষ্কার করেছিল। কিন্তু তারপরও দিলীপবাবু তাঁকে কাছে টেনে নেন। সেই শ্যামলবাবুই এদিন বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে সঙ্গীদের নিয়ে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপধ্যায়, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস তাঁর হাতে দলের ঝান্ডা তুলে দেন। শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় এসেই শ্যামলবাবু বিজেপিকে কোমা থেকে না বেরতে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, বিজেপিতে থাকার সময় আমার আচরণে কোনও তৃণমূল কর্মী আঘাত পেয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে এটুকু আশ্বাস দিতে পারি এই জেলায় বিজেপি আর কোমা থেকে বেরতে পারবে না। যারা কোনওদিন দল করেনি বিজেপি তাদেরকেই পদে বসিয়েছে। ওরা সবসময় মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করতে চায়। নেতারা নিজেদের আখের গোছানো ছাড়া আর কিছু বোঝে না। এসব কারণেই বিজেপি ছেড়েছি। মানুষের কাজ করব বলেই তৃণমূলে যোগদান করেছি। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁকে অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাই তিনি তৃণমূলে গেলেও সংগঠনের ক্ষতি হবে না।
এদিন শ্যামলবাবুর সঙ্গে বিজেপির আরও কয়েকজন পদাধিকারী শিবির বদল করেছেন। তাঁদের কেউ বুথ সভাপতি আবার কেউ মণ্ডল সভাপতি ছিলেন। কয়েকজন মণ্ডলের সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির সংগঠন অনেক আগেই তলানিতে ঠেকেছে। লড়াকু মানসিকতার নেতার অভাব রয়েছে। শ্যামলবাবুরা শিবির বদল করায় সংগঠন ধাক্কা খাবে। তাঁর সঙ্গে দলের এক গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের লড়াই ছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হয়েই তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি পদে না থেকেও শহরে সমান্তরালভাবে সংগঠনের কাজ করছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের সময় দিলীপবাবুকে নিয়ে তিনি চায়ে পে চর্চার আয়োজন করেন। একাধিক জায়গায় ভোটপ্রচারও করেছিলেন। বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, দল নিজের গতিতে এগবে। যারা দলের সৈনিক তারা কখনোই শিবির বদল করবে না। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা খোকন দাস বলেন, জেলায় কেউ বিজেপি করবে না। ওদের কোনও নীতি নেই।
এদিন বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে শহর তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলাররা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দলের নেতা তন্ময় সিংহরায়, দেবু টুডু সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানেই বিজেপি নেতা এবং কর্মীদের হাতে শাসকদলের ঝান্ডা ধরানো হয়।
বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলনিতে প্রাক্তন বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি শ্যামল রায়ের তৃণমূলে যোগদান। নিজস্ব চিত্র