• টোটোর বৈধতা নিয়ে এবার বিপরীত অবস্থানে পরিবহণ দপ্তর ও পুরসভা
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: টোটোর বৈধতা প্রসঙ্গে প্রশাসনের দুই শিবিরের অবস্থান পরস্পর বিরোধী। একপক্ষের চোখে যখন ব্যাটারি চালিত তিনচাকা যানটি ‘অবৈধ’, তখন অন্য শিবির তাকে ‘বৈধ’ বলছে। আর এর মাঝে ক্রমশ লঘু হচ্ছে অযাচিত টোটো দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গটি। মাত্রাতিরিক্ত যানজটে ভুগছে শহর। তাহলে টোটোকে বৈধতা দিয়ে লক্ষ টাকা পুরসভার আয়ের সারার্থ কী? উঠছে প্রশ্ন। 


    জেলা পরিবহণ দপ্তর সূত্রের খবর, তারা টোটোকে যান হিসাবে মানতেই রাজি নয়। ফলে পত্রপাঠ তারা টোটোকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের মতে, ই-রিকশর বৈধতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের রেজিস্ট্রেশন এবং রোড ট্যাক্স নিচ্ছে প্রশাসন। সরকারি খাতায় তাদের ‘অস্তিত্ব’ রয়েছে। কিন্তু টোটো নিয়ে অনমনীয় মনোভাব তাদের। যদিও এই টোটোকেই বৈধতা দিচ্ছে রানাঘাট পুরসভা। কীভাবে? সম্প্রতি পুরসভার থেকে বৈধতা পাওয়া কিছু চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পুরসভার কাছে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য তাদের দিতে হচ্ছে এককালীন ১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়াও সেই রেজিস্ট্রেশন চালু রাখার জন্য প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। পুরসভার হিসেব বলছে, আশেপাশের পঞ্চায়েত থেকে আসা টোটো বাদ দিলে, প্রায় ১৪০০টি টোটো রয়েছে রানাঘাট পুরসভা এলাকায়। যার মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০০টির কাছাকাছি টোটো রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে এটা স্বাভাবিকভাবেই অনুমেয়, প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে পুরসভার। যদিও পুরসভার দাবি, ভবিষ্যতে শহরে টোটোর দৌরাত্ম্য রুখতেই একটি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি নিয়ে এসেছে তারা। 


    কিন্তু এর মাঝে শহরের বাসিন্দারা কী বলছেন? তাঁদের দাবি, টোটো বৈধ অথবা বৈধ নয়, এই বিষয়ের চেয়েও বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত টোটোর লাগামছাড়া দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। কিন্তু তা নিয়ে কার্যত চুপ প্রশাসনের সব মহল। ফলে দিনের পর দিন যাত্রীর তুলনায় টোটোর সংখ্যা বেড়ে চলেছে রানাঘাট শহরে। অপরিসর রাস্তাগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত টোটোর কারণে প্রতিদিন যানজট এখন স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়া যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড বানিয়ে নেওয়া, রুট ছাড়াই এদিক ওদিক ছুটে বেড়ানোর মতো ঘটনা তো রয়েছেই। ব্যস্ত সময়ে টোটোর চাপে কার্যত হাঁসফাঁস করে সুভাষ অ্যাভেনিউ, জগপুর রোড, জিএনপিসি রোডের মতো শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। সম্প্রতি টোটোর রেজিস্ট্রেশন এবং কিউআর কোড দেওয়া হয়েছে রানাঘাটে। কিন্তু ছোট যদি অবৈধ হয় তাহলে তার রেজিস্ট্রেশন কেন করল পুরসভা? বিষয়টি নিয়ে নদীয়া জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অনির্বাণ বিশ্বাস বলেন,  ই-রিকশ বৈধ হলেও টোটো অবৈধ। কেউ তাকে রেজিস্ট্রেশন কীভাবে দিচ্ছে আমরা বলতে পারব না। হতে পারে শহরের টোটোর সংখ্যা নির্দিষ্ট করতেই পুরসভা ওই রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যদি অবৈধ হয় তাহলে পরিবহণ দপ্তর কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? শহরের রাস্তায় টোটো চলাচল করতে দেওয়া যাবে না, এমন কোনও নির্দেশিকা আমাদের কাছে নেই। যেহেতু রানাঘাট শহরে প্রতিদিন বাইরে থেকে প্রচুর টোটো এসে ভিড় বাড়াচ্ছে তাই আমরা শহরের মধ্যে থাকা টোটোগুলিকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সেই সংখ্যা সীমিত করতে চাইছি। সেক্ষেত্রে বাইরে থেকে লোকজন টোটো নিয়ে শহরে ঢুকলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার মতো জায়গায় থাকব আমরা। পুরসভার রেজিস্ট্রেশন থাকলে কোনও সমস্যা হলে সেই তালিকা ধরে টোটোগুলি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। -ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)