নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: ফের ‘কাঠগড়ায়’ শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল। এবার বিনা চিকিৎসায় সাতবছরের শিশুমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, গুরুতর অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার জন্য কাকুতিমিনতি করা হলেও সাড়া দেননি হাসপাতালের চিকিৎসক। উল্টো শিশুর আত্মীয়দের সঙ্গে দুর্বব্যহার করেছেন। এই অবস্থায় রবিবার ওই শিশুর মৃত্যুর পর হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান আত্মীয়রা। এনিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। গোটা ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের সুপার ডাঃ চন্দন ঘোষ অবশ্য বলেন, শিশুমৃত্যুর ওই ঘটনা নিয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই শিশুর আত্মীয়দের ঘটনাটি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।
এদিন সকালে হামিদ রাজাকে (৭) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুর নাক দিয়ে রক্তপাত হচ্ছিল। সঙ্গে দুই কানে ছিল ব্যাথা। তাকে প্রথমে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বাইরে ইএনটি’র কাছে দেখানোর পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। তখন শিশুটি হাসপাতাল চত্বরে পড়ে যায়। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা হয়। সেই সময় তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে সরব হন মৃতর আত্মীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। পুলিস কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
মাটিগাড়ার খোলাইবক্তরিতে ওই শিশুর বাড়ি। তার বাবা মহম্মদ রুবেল পেশায় দিনমজুর। মা দোলনা খাতুন গৃহবধূ। ছেলের মৃত্যুর পর তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। তাঁদের আত্মীয়রা বলেন, সকালে বাথরুম যাওয়ার সময় ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর জরুরি বিভাগে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। বারবার অনুরোধ করার পর চিকিৎসক দেখে ছেড়ে দেয়। আউটডোর বন্ধ থাকায় বাইরে চিকিৎসক দেখানোর পরামর্শ দেন। এরপর জরুরি বিভাগ থেকে বের হতেই ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন চিৎকার করলে ছেলেটির বাবা-মা’র সঙ্গে দুর্বব্যবহার করেন চিকিৎসক। বারবার অনুরোধ করার পর ছেলেটিকে ভর্তির সুপারিশ করেন চিকিৎসক। সেই সময় শিশুটির মৃত্যু হয়।
তাঁদের প্রতিবেশী শামিমা খাতুনের অভিযোগ, চিকিৎসকের উদাসীনতায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল শিশুটির। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্বাস্থ্যদপ্তরের কাছে জানাব। হাসপাতালের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত শিশুর আত্মীয়দের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তাতে মৃতের আত্মীয়রা রাজি হননি। তা হলেও শিশুমৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, ১০ দিন আগেই সদ্যোজাতের মৃতদেহ গায়েবের অভিযোগ ঘিরে হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এদিন বিনা চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে উত্তেজনা। - নিজস্ব চিত্র।