• ‘ডানা’কে ভয়ঙ্কর হতে দেয়নি ২টি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বঙ্গোপসাগরের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল দুটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত। আবহাওয়াবিদরা আরও মনে করছেন, ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশ করার পর ঘূর্ণিঝড় সিস্টেমটি বেশি দূর পর্যন্ত যেতে না পারার পিছনেও বিপরীত ঘূর্ণাবর্তেরও প্রভাব ছিল। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা এইচ আর বিশ্বাস জানিয়েছেন, বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতিসহ আরও কিছু বিষয় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। ভিতরকণিকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য তীব্রতা কমাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। আরও সমীক্ষা করে ঘূর্ণিঝড়ের উপর বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করবে আবহাওয়া দপ্তর। তখন বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।  


    তীব্র মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ‘ডানা’ ওড়িশা উপকূলে ভদ্রক জেলার ধামরা ও ভিতরকণিকা সংলগ্ন কোনও জায়গা গিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকবে  বা ‘ল্যান্ডফল’ হবে বলে জানিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। ল্যান্ডফলের স্থান নিয়ে আবহাওয়া দপ্তর যে পূর্বাভাস দিয়েছিল তা মিলে গিয়েছে। তবে ‘ডানা’র তীব্রতা যতটা হবে বলা হয়েছিল ততটা হয়নি। ওড়িশা এবং সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া যতটা জোরালো হবে বলা হয়েছিল হয়নি সেটাও। এতে একদিকে ভালোই হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমেছে। ল্যান্ডফলের জায়গার মতো সংলগ্ন পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলে ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ অতটা হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুর উপকূলে তা ঘণ্টায় ৮০-৯০ কিলোমিটার ছিল বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।


    আবহাওয়া কর্তাদের দাবি, উপকূলে আছড়ে পডার আগে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ডানার দুদিকে দুটি ঘূর্ণাবর্ত থাকবে সেটা তাঁদের আগে থেকে জানা ছিল। তাই পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, তীব্র মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এটি আছড়ে পড়বে। খুব বা অতিতীব্র মাত্রার ঘূর্ণিঝড় যে ডানা হবে না সেটা আগেই বলা হয়েছিল। বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত, বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতিসহ অন্যকিছু কারণে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা পূর্বাভাসের থেকে আরও কতটা কমেছে, তা বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ হলে বোঝা যাবে। তীব্রতা কমে যাওয়া ছাড়াও উপকূল অতিক্রম করার পর ডানা বেশি দূর না অগ্রসর হয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০২১ সালে ওড়িশার উপকূলে  ‘ডানা’র ল্যান্ডফল এলাকার থেকে কিছু দূরে বালেশ্বরে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। এই ঘূর্ণিঝড়টির দুর্বল অংশ ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড হয়ে উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত গিয়েছিল। সেখানে ডানা উপকূল অতিক্রম করে উত্তর ওড়িশার উপরই দুর্বল হয়ে পড়ে। রবিবার এটি ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হয়েছে। বিপরীত ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে ডানা বেশি দূর না গিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে আবহাওয়াবিদা মনে করছেন। কয়েকমাস আগে বঙ্গোপসাগরের একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢোকার পর মধ্য ও পশ্চিম ভারত হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত গিয়েছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)