নিজস্ব প্রতিনিধি, পেট্রাপোল ও কলকাতা: বিজেপি কি ধরেই নিয়েছে যে, আসন্ন উপ নির্বাচনে তারা হালে পানি পাবে না? রাজ্যে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন আসতে এখনও বছর দেড়েক বাকি। কিন্তু এখন থেকেই ছাব্বিশের ভোট-প্রচার শুরু করে দিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ! কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ বা আসন্ন উপ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী সভা নয়, পুরোদস্তুর সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই তিনি বাংলার ক্ষমতা দখলের সলতে পাকালেন। ভাষণের আগাগোড়া আক্রমণের কেন্দ্রে থাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেস। এভাবেই রবিবার পেট্রাপোল সীমান্তে আয়োজিত কেন্দ্রীয় সরকারি অনুষ্ঠান হয়ে উঠল রাজনৈতিক প্রচারের মঞ্চ। বিএসএফ, ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এলপিএআই) পদস্থ কর্তাদের পাশে রেখে আগাম ভোট-প্রচার সারলেন অমিত শাহ।
এদিনই সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে দলের ‘সদস্যতা অভিযান’-এর সূচনা করতে গিয়ে শাহ বলেন, ‘বাংলা থেকে এক কোটির বেশি সদস্য করাতে হবে। তা যদি সম্ভব হয়, তাহলে ২০২৬-এ আমরা ক্ষমতায় আসব। ছাত্র-যুব-মহিলা সহ সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষকে এই অভিযানের আওতায় আনতে হবে।’ সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, যাঁরা ১০০ দিনের কাজ পাচ্ছেন না, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে হবে, বিজেপি এলে সব হিসেব মিটিয়ে দেওয়া হবে। তৃণমূল জানিয়েছে, দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে স্বয়ং শাহের এই বার্তা প্রমাণ করে দিল, বাংলাকে বঞ্চনাই ওই দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচি।
ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের পেট্রাপোলে অত্যাধুনিক যাত্রী টার্মিনাল ভবন এবং মৈত্রীদ্বারের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এলপিএআইয়ের চেয়ারম্যান, বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি, বিএসএফের ডিজি সহ সর্বোচ্চ পদাধিকারীরা। দর্শকাসনে ছিল গেরুয়া পাঞ্চাবি ও তিলকধারী লোকজনের ভিড়। এমনকী, সীমান্তর আশপাশের দোকানপাট ঢেকে দেওয়া হয়েছিল গেরুয়া রঙের পর্দায়। এদিন বক্তব্যের প্রায় শুরু থেকেই তিনি নরেন্দ্র মোদির কাজের ফিরিস্তি দিতে শুরু করেন। বলেন, ‘মোদিজি আরোগ্যের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে সবাইকে দিচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে সমস্যা আছে। তবে চিন্তা নেই। ২০২৬ সালে বিজেপির সরকার আসার পর আপানারা সবাই পাবেন। আমি আজ বাংলার জনগণকে বলে যাচ্ছি, ২০২৬ সালে পরিবর্তন করে দিন। অনুপ্রবেশ আমরা বন্ধ করে দেব। অনুপ্রবেশ বন্ধ হলেই বাংলায় শান্তি আসবে।’ এরপর তিনি ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প খাতে বাংলাকে বঞ্চনার সাফাই দিতে শুরু করেন। পরিসংখ্যান তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কংগ্রেস বা ইউপিএ সরকারের তুলনায় বর্তমান এনডিএ সরকার রাজ্যকে অনেক বেশি টাকা দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘মোদি যে টাকা দেন, সব তো দুর্নীতিতে চলে যায়। তবে ২৬ সালের ভোট গণনার সঙ্গে সঙ্গে আচ্ছে দিন আসবে।’ এতকিছু বললেও যে আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে একটি বাক্যও খরচ করেননি তিনি।
শাহের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর চেয়ারের একটা গুরুত্ব আছে। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক পর্যটক হিসেবে এসে নির্লজ্জ ভোট-প্রচার করলেন। আর অনুপ্রবেশ? সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব কার? তাহলে উনি কি নিজের ব্যর্থতাই স্বীকার করে নিলেন?’