• গরফায় বাড়ির তালা ভেঙে সর্বস্ব লুট জেনারেল ডায়েরি করেই খালাস পুলিস
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুজোর সময় ভিন রাজ্যে ঘুরতে গিয়েছিল গোটা পরিবার। ফিরে দেখে, বাড়ির সদর দরজার তালা ভাঙা। গোটা বাড়ি তছনছ। দু’টি আলমারিই ভাঙা। খোয়া গিয়েছে অলঙ্কার সহ ঘরে থাকা নগদ টাকা। মূল্যবান সব সামগ্রীও গায়েব। গৃহকর্ত্রী পুলিসের দ্বারস্থ হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্তকারী অফিসার। পুলিসি উদ্যোগ বলতে এটুকুই। অভিযোগকারিণীকে কথার মারপ্যাঁচে আশ্বস্ত করে এই লুটের ঘটনায় কোনও মামলা রুজু করেনি গরফা থানা। বাড়ির তালা ভেঙে লুটের ঘটনায় শুধুমাত্র ‘জেনারেল ডায়েরি’ করেই দায় সেরেছেন থানার অফিসাররা। প্রায় দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অধরা দুষ্কৃতীরা। গৃহকর্ত্রীর দাবি, ফোন করলেও ধরছেন না তদন্তকারী অফিসার।


    গরফা থানা এলাকার পূর্বাচল বিধান রোডের বাসিন্দা দেবারতি ভুঁইঞা। পুজোর ছুটিতে সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে একজন পরিচারিকা কাজ করেন বটে, তবে বাড়িতে কেউ না থাকায় তাঁকেও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৩ অক্টোবর, দশমীর সকালে ওই পাড়ারই অন্য বাড়িতে কাজে যাচ্ছিলেন পরিচারিকা। তিনি দেখেন ভুঁইঞা বাড়ির দরজা খোলা। বিকেলে ওই পথ দিয়ে ফেরার সময় দরজাটি একই অবস্থায় খোলা দেখে সন্দেহ হয় পরিচারিকার। গৃহকর্ত্রীকে ফোন করে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা কি ফিরে এসেছেন?’ দেবারতিদেবী জানান, তাঁরা এখনও ফেরেননি। তাহলে দরজা খুলল কে? এক প্রতিবেশীকে নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে পরিচারিকা দেখেন, জামা-কাপড় যত্রতত্র ছড়ানো। আলমারির সিন্দুক ভাঙা। ১৫ তারিখ শহরে ফিরেই থানায় অভিযোগ করেন দেবারতিদেবী। তিনি বলেন, ‘থানার তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ছবিও তোলেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। সেদিনই দরখাস্ত জমা দিই।’ দেবারতির দাবি, ‘পুলিস জানতে চায়, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত টানতে চাইছি কি না? আদালতের ঝামেলা পোহাবেন, নাকি থানা থেকেই সবটা মিটমাট করে দেওয়া হবে?’ একে মাথায় সর্বস্ব হারানোর চিন্তা, তারপর থানায় দিনভর দৌড়াদৌড়িতে পুলিসি ভাষার মারপ্যাঁচ বুঝতে পারেননি দেবারতিদেবী। তিনি বলেন, ‘থানা থেকেই পুলিসকে বিষয়টি মিটমাট করে দেওয়ার জন্য বলি। ১৬ অক্টোবর ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি জেনারেল ডায়েরি করে তার নম্বরটি দেওয়া হয় তাঁকে।’ পুলিস জানিয়েছে, ‘আমরা চেষ্টা করছি তো!’


    এখানেই গরফা থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাড়ির তালা ভেঙে লুটের ঘটনায় কীভাবে পুলিস শুধুমাত্র জেনারেল ডায়েরি করল? কেন অপরিচিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারায় এফআইআর রুজু করা হল না? অভিযোগকারিণীর কথায়, ‘পুলিস কেস হওয়ার মতো ঘটনা আমার জীবনে প্রথম। আমি জিডি ও এফআইআরের ফারাক বুঝিনি। তার জন্যই কি আমায় ভুল বোঝানো হল?’ এপ্রসঙ্গে কলকাতা পুলিসের ডিসি (সাউথ সাবার্বান) বিদিশা কলিতা বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগকারিণী জানিয়েছিলেন, কিছু নথিপত্র খোয়া গিয়েছে। তার ভিত্তিতে জেনারেল ডায়েরি করা হয়। পরবর্তী তদন্তে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু অলঙ্কারও খোয়া গিয়েছে। তার ভিত্তিতে অবশ্যই মামলা দায়ের করা হবে।’
  • Link to this news (বর্তমান)