• তুবড়ি-ফুলঝুরিরা অতীত, নতুন ধরনের বাজিতে চোখ ক্রেতাদের
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ‘ফুলঝুরি, চড়কি ছাড়া নতুন কিছু আছে? অন্য ভ্যারাইটির কিছু থাকলে দেখান।’ চম্পাহাটির হাড়ালে বাজির বাজারে গিয়ে এমন আবদারই বেশিরভাগ ক্রেতার। তাঁদের নিরাশ করছেন না ব্যবসায়ীরা। একের পর এক চমকে দেওয়া বাজি বের করছেন ঝুলি থেকে। সে সব দেখে চমৎকৃত বাজিপ্রেমীরা। তুবড়ি, চড়কি কিংবা রং মশালের ‘আপডেটেড ভার্সন’ বাজারে এসেছে। তা হাতে পেয়ে খুশি সবাই। বাক্স বাক্স কিনছেন। দোকানদারদের বক্তব্য, ‘চিরাচরিত বা পুরনো ধরনের বাজি পছন্দ হচ্ছে না ক্রেতাদের। তাঁদের অধিকাংশ নতুন ধরনের খোঁজ করছেন।’


    কসবা থেকে ছেলেকে নিয়ে হাড়ালে এসেছিলেন এক দম্পতি। একটি দোকান থেকেই কিনলেন তিন ব্যাগ বাজি। বেশিরভাগই সেল। চটকদার সব নাম সেগুলির। তাঁরা বললেন, ‘আমাদের সময় বাজি বলতে চড়কি, রকেট, তুবড়ি ইত্যাদিই বুঝতাম। এখন তো ছেলেমেয়েরা ওসব ফাটাতেই চায় না। তারা নতুন ধরনের খুঁজছে।’ বাজি বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে বহু দোকানে ডাঁই করা রয়েছে তুবড়ি, চড়কি। কিন্তু সেগুলি কেনার দিকে ঝুঁকছেন না কেউ। তাঁরা বাহারি নামের বাজি দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। একটি দোকানে পিকক, জাম্পিং ফ্রগ, রাবণ, মাশরুম নামের আতসবাজি বিক্রি হচ্ছে। কয়েকজন ক্রেতা দেখেই কিনতে ঢুকে পড়লেন। ‘এগুলি কেমন?’ প্রশ্নের উত্তরে জগদীশ নস্কর নামে দোকানদার বললেন, ‘এতে আগুন দিলেই অনেক রঙের ফুলকি বেরবে। রংবেরং আলো।’ অন্যান্য দোকানদারদের কাছ থেকে জানা গেল, জাম্পিং ফ্রগ দেখতে অবিকল ব্যাঙের মতো। আগুন দিলে পিড়িং পিড়িং করে লাফাতে শুরু করবে। মাশরুম বাজি তৈরি করা হয়েছে ব্যাঙের ছাতার আদলে। সেটির সলতেতে আগুন দিলেই বেরবে ফুলকি। আর হবে রঙের খেলা। হেলিকপ্টার বাজিটির রকমসকম চমকপ্রদ। আগুল দিলেই ঘুরতে ঘুরতে আকাশে উড়ে যাবে। এছাড়াও রয়েছে পান পটকা। সেটি আগুনের স্পর্শে এলেই দুম করে ফাটবে।


    এর পাশাপাশি শটস এবং সেলের চাহিদাও রয়েছে তুঙ্গে। বিভিন্ন দোকানে বাহারি এবং অত্যাধুনিক সম্ভার সাজানো রয়েছে। কেউ কিনছেন ১৫টি, অনেকে ৫০ টাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কোনও সেল আকাশে ফাটার পর মালা তৈরি করবে। কোনওটি আবার ছড়াবে সোনালি ফুলকি। এ সব নিয়ে দোকানদারদের প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলছেন ক্রেতারা। কয়েকজন ক্রেতা দু-চারটি দোকান ঘুরলেন। বিস্তর দরদাম করলেন। তারপর ঘুরে ঘুরে ব্যাগ ভর্তি করে শুধু সেল কিনলেন। ‘তাহলে কি পুরনো বাজির দিন গিয়েছে? তা শেষের পথে?’ এই প্রশ্নের উত্তর সরল। বিক্রেতারা বললেন, ‘কিছু লোক এখনও পুরনো বাজিই কেনেন। তবে নতুন ধরনের বাজি কেনার ঝোঁক এখন বেশি। অদূর ভবিষ্যতে আবার ওই বাজিগুলি তৈরির পরিমাণ কমে যাবে। বাজার নেবে আরও নয়া রকমের বাজি।’ 


    কালীপুজোর আগে শেষ রবিবার। ছুটির দিন বলে ভোর থেকেই জমজমাট হাড়াল। বেলা গড়াতেই দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেল। পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদেরও ব্যাপক উৎসাহ। সকলেরই প্রায় একই বক্তব্য, ‘তাক লাগিয়ে দেব কালীপুজোয়।’ ব্যবসায়ীরা বাজার ভালো হওয়ায় খুশি। বলছেন, ‘ঝড়বৃষ্টির কারণে তো কয়েকদিন কেনাবেচাই হয়নি। এবার শেষ কয়েকদিন ভালো ব্যবসা হবে মনে হচ্ছে। জয় মা কালী।’ ছবি: পিন্টু মণ্ডল
  • Link to this news (বর্তমান)