• বিহারে উদ্ধার নাবালিকা, ধৃত ৩, আন্তঃরাজ্য নারী পাচার চক্রের হদিশ পুলিসের
    বর্তমান | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, তারকেশ্বর: আন্তঃরাজ্য নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করল তারকেশ্বর থানার পুলিস।‌ রবিবার হুগলি গ্রামীণ জেলার পুলিস সুপার কামনাশিস সেন সাংবাদিক সম্মেলন বলেন, প্রেমের অভিনয় ও কাজের টোপ দিয়েই কাজ হাসিল করত তারা। এই পাচার চক্রের দুই এজেন্ট ও এক পান্ডাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতরা হল মিজানুর মণ্ডল, শ্রীরাম রায় ও নন্দকিশোর কুমার। 


    মিজানুরের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে, শ্রীরাম থাকে কলকাতার তারতলায়। নন্দকিশোর অবশ্য এরাজ্যের বাসিন্দা নয়, তার বাড়ি বিহারের চম্পারণে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ জুলাই তারকেশ্বর এলাকা থেকে এক নাবালিকা নিখোঁজ হয়। ১৩ জুলাই তারকেশ্বর থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে ওই নাবালিকার পরিবার। তদন্তে নেমে তারকেশ্বর থানার পুলিস ১৯ জুলাই বিহার থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে। নাবালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পারে, সামাজিক মাধ্যমে রাহুল নামে এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারা। শেষমেশ হাওড়ায় প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে যায় এই নাবালিকা। তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাওড়া থেকে বিহারে নিয়ে যায় রাহুল। পরে জানা যায়, রাহুলের আসল নাম মিজানুর রহমান। মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে ওই নাবালিকাকে বিহার থেকে উদ্ধার করে পুলিস। এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর একাধিক তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিস এই ঘটনার সঙ্গে নারী পাচার চক্রের যোগের সন্ধান পায়। শুধু প্রেমের ফাঁদ নয়, কাজের টোপ দিয়েও মহিলা ও নাবালিকাদের ভিন রাজ্যের যৌনপল্লিতে পাচার করা হতো বলে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাদক সেবন করিয়ে তাদের দিয়ে অশ্লীল নাচ করতে বাধ্য করা হতো। বিহার লাগোয়া নেপালেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাঠানো হতো তাদের।


    তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, মূলত সামাজিক মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ ও কাজের টোপ দিত মিজানুর ওরফে রাহুল ও শ্রীরাম রায়। এরপর মহিলা ও নাবালিকাদের ফাঁদে ফেলে নন্দকিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হতো। এই চক্রকে কব্জায় আনতে ফাঁদ পাতে তারকেশ্বর থানা ও হুগলি গ্রামীণ জেলার পুলিস। পুলিস সূত্রে জানা যায়, তারকেশ্বর থেকে অপহৃত নাবালিকা বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারে, সে প্রতারিত হয়েছে। বিহার থেকেই সে যোগাযোগ করে তারকেশ্বরে। বিহার পুলিসের সহযোগিতায় তারকেশ্বর থানা উদ্ধার করে নাবালিকাকে। তবে অপরাধীদের ধরতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিসকে। অপরাধীরা ফোন না করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল ও মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করত। মাঝে মাঝে তারা আশ্রয় নিত নেপালেও।


    গত ২৫ অক্টোবর মিজানুর মণ্ডল ও শ্রীরাম রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিস। ২৬ অক্টোবর নন্দকিশোর কুমারকে নদীয়া জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে পুলিস গ্রেপ্তার করে।


    পুলিস সুপার জানান, ধৃতদের পুলিস হেফাজতে নিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা যুক্ত, তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে যাতে কেউ পা দেন, সেকারণে নাবালিকা ও মহিলাদের সতর্ক করা হচ্ছে। মিজানুরের জেল হেফাজত হয়েছে। বাকি দু’জনকে সাতদিনের পুলিস হেফাজতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)