• মালদহে পুকুর চুরি, রেশন দুর্নীতির দায়ে তৃণমূল অঞ্চল সভাপতির কয়েক কোটি টাকা জরিমানা
    ২৪ ঘন্টা | ২৮ অক্টোবর ২০২৪
  • রণজয় সিংহ: রেশন কেলেঙ্কারির বড়সড় পর্দাফাঁস মালদায়। অভিযুক্ত মালদার বৈষ্ণবনগর বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক চন্দনা সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তথা অঞ্চলের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। পেশায় কালিয়াচক ৩ ব্লকের রেশন ডিলার।

    রেশন ডিলার আশরাফুল ইসলামকে রেশন কেলেঙ্কারির জন্য ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা করল জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর। পাশাপাশি তার লাইসেন্স বাতিল করে তাকে সাসপেন্ড করা হল। যদিও অভিযুক্ত রেশন ডিলার পাল্টা খাদ্য দফতরের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

     

    খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যেভাবে সরকারি খাদ্য সামগ্রীতে দুর্নীতি করেছেন ওই  ডিলার, তার জেরেই এই বিপুল টাকার অংকের জরিমানা করা হয়েছে। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গেছে কালিয়াচক ৩ নং ব্লকের সাহাবানচক অঞ্চলে ২০১৫-২০২২ সালের মধ্যে তিনি রেশন কার্ডের অপব্যবহার ও অবৈধ ভাবে বন্টন করেছেন। আশরাফুলের অধীনে মোট ১৩ হাজার রেশন কার্ড ছিল। যার মধ্যে ৭০০০টি কার্ড অবৈধভাবে ব্যবহৃত হত, যেসবের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে নিয়মিতভাবে রেশন সামগ্রীর অস্বচ্ছ ও অবৈধ বন্টন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে।

    মালদা জেলা খাদ্য নিয়ামক শাশ্বতসুন্দর দাস জানিয়েছেন, সদর মহকুমা খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে কালিয়াচক ৩ ব্লকের সাহাবানচক অঞ্চলের রেশন ডিলার আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে আপাতত সাসপেন্ড করে ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কালিয়াচক ৩ ব্লকের সাহাবানচক অঞ্চলে রয়েছে এই রেশন ডিলারের দোকান। ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রেশন কার্ডের অপব্যবহার,সরকারি খাদ্য সামগ্রী বন্টনে দুর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে। এমনকি এই বিষয়ে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার অফিসেও এই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে একটি অভিযোগও করা হয়। পাশাপাশি জেলা খাদ্য দফতরেও ওই ডিলারের বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রমাণসহ গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ করেছিলেন এলাকার একাংশ রেশন গ্রাহকেরা।এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তদন্ত।তাতেই একের পর এক রেশন সামগ্রী বন্টনে অনিয়ম,খাদ্য সামগ্রী বিলির ক্ষেত্রে কোনরকম স্লিপ ইস্যু না করা,রেশন কার্ডের অপব্যবহার করা সহ একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ে। যা গত আট বছর ধরে এই রেশন ডিলার নিজের দোকানে থেকেই এরকম বেআইনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। এরপরই এই রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করে জরিমানা বাবদ ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করে জেলা খাদ্য দফতর। এদিকে সাহাবাগানচক এলাকার একাংশ রেশন গ্রাহকদের অভিযোগ,ওই ডিলারের কাছে কোনদিনই নিয়মিত সরকারি খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায় নি।এমনকি সীমান্তের ওপারে রেশন সামগ্রী পাচার করা হতো।ভুয়ো অনেক রেশন কার্ড তৈরি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি খাদ্য সামগ্রীতে বন্টন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের জেরেই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়।

    জেলা খাদ্য নিয়ামক শাশ্বতসুন্দর দাস বলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে এটাই সব থেকে বড় শাস্তি। গত আট বছর ধরে যেভাবে রাজ্য সরকারের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে সেব্যাপারে তদন্ত করেই এই বিপুল অঙ্গের জরিমানা করা হয়েছে। যদিও ঘটনাটি আমার মালদা জেলায় দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঘটেছে।মালদা সদর খাদ্য দপ্তরের পক্ষ থেকেই তদন্ত করেই এই জরিমানাটি করা হয়েছিল। অভিযুক্ত এই রেশন ডিলার আশরাফুল ইসলামকে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। শুধু জানান উচ্চ আদালতে দারস্থ হচ্ছেন।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)