গত রাজ্য সম্মেলনের পরেই দলে মহিলাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য আইসিসি তৈরি করেছিল সিপিএম। সর্বভারতীয় স্তরেও এমন কমিটি রয়েছে সিপিএমে। বাংলায় সিপিএমের এই কমিটির মাথায় রয়েছেন বর্ধমানের মহিলানেত্রী অঞ্জু কর। তা ছাড়া তালিকায় রয়েছেন রেখা গোস্বামী, আভাস রায়চৌধুরী এবং সুমিত দে। তবে তন্ময়ের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে সেখানে রেখাকে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে সিপিএমে কৌতূহল রয়েছে। কারণ, রেখা উত্তর ২৪ পরগনার নেত্রী। তন্ময়ও উত্তর ২৪ পরগনারই নেতা। ফলে ‘স্বার্থের সংঘাত’-এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রেখাকে বাদ রাখার দাবিও উঠতে শুরু করেছে দলের অভ্যন্তরে। যদিও উত্তর ২৪ পরগনার এক শিক্ষকনেতার বিরুদ্ধে এক মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করেছিল সিপিএমের আইসিসি। সেখানে ছিলেন রেখা।
রবিবার দুপুরে ফেসবুকে ‘লাইভ’ করে তন্ময়ের বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন ওই মহিলা সাংবাদিক। তার পরেই সিপিএম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বুঝিয়ে দিয়েছিল, বিষয়টি নিয়ে তারা পদক্ষেপ করবে। সন্ধ্যায় বারুইপুরে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা দফতর থেকে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়ে দিয়েছিলেন, তন্ময়কে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। রাতে সেই সংক্রান্ত বিবৃতিও জারি করে দেয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। ‘সাসপেনশন’ এক ধরনের শাস্তি। তবে তন্ময়কে ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ’ না দিয়ে আগেই কেন রাজ্য কমিটি সেই পদক্ষেপ করে ফেলল, ইতিমধ্যে সেই প্রশ্নও তুলতে শুরু করেছেন তন্ময়-অনুগামীরা।
সেলিম রবিবারই জানিয়েছিলেন, তন্ময়ের বিষয়ে তদন্ত শেষ করার জন্য আইসিসি-কে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। কত দিনে শেষ করতে হবে তদন্ত? সিপিএম সূত্রে খবর, বুধবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বৈঠকে বসবে। সেখানেই এই সময়সীমা এবং আইসিসি-তে বাইরে থেকে আরও কাউকে যুক্ত করা যায় কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা। উল্লেখ্য, ওই মহিলা সাংবাদিক সিপিএমের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। তাঁর ফেসবুক লাইভ ঘিরে ঘরে-বাইরে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই তন্ময়কে সাসপেন্ড করেছে দল।
দলের কাছে অভিযোগ হলে এক ধরনের বিষয় হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। অভিযোগকারিণীও সিপিএমের কেউ নন। তবে সিপিএম ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘গুরুতর’। সিপিএম সূত্রে খবর, ওই সাংবাদিককে বার্তা দেওয়া হবে, তিনি যাতে তাঁর অভিযোগ আইসিসি-কেও জানান। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত দলীয় পরিসরে নিজের মতামত জানাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সিপিএম নেতৃত্বের অনেকের। সিপিএম সূত্রে খবর, পরিকল্পনা করা হচ্ছে আরও কিছু মহিলা সাংবাদিকের সাক্ষ্যগ্রহণ করার। তাঁদের সঙ্গে তন্ময় কী ধরনের আচরণ করতেন, ইয়ার্কির নামে তা মাত্রা ছাড়াত কি না, সে বিষয়েও জানতে চায় সিপিএম। সব মিলিয়েই তন্ময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় দল।
প্রসঙ্গত, সিপিএমের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই সম্মেলনের প্রাক্কালে গোটা ঘটনা নিয়ে অনেকে ‘অভিসন্ধি’রও অভিযোগ তুলছেন। এমনকি, তন্ময়ও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, তিনি মনে করেন সম্মেলনের আগে তাঁকে ‘ফাঁসানো’ হচ্ছে। যদিও সিপিএম অভিযোগকে ‘লঘু’ করে দেখতে চায় না। ফলে বুধবারেই সিপিএম ঠিক করে দিতে চায়, কত দিনে তন্ময়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে হবে আইসিসি-কে। আলিমুদ্দিন এ নিয়ে কোনও বিলম্ব চায় না বলেই জানাচ্ছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা।