• কালীপুজোয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • সামনের বৃহস্পতিবারে কালীপুজো। তাঁর আগেই সেজে উঠেছে শহর। পুজো প্যান্ডেলগুলিকে ঘিরে চারিদিকে চুইয়ে পড়ছে আলোর রোশনাই। এখনই বড় বাজেটের প্যান্ডেলগুলিতে পুজোর উদ্বোধনের ধুম পড়ে গিয়েছে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদেরও আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার থেকেই শহরের একাধিক পুজো উদ্বোধনে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এদিন বিকেলেই তিনি শুরু করে দিয়েছেন একাধিক পুজোর উদ্বোধন।

    বিকেল চারটে নাগাদ তিনি যান গিরিশ পার্কের একটি পুজো প্যান্ডেলে। এরপর জানবাজারের মায়ের বাড়িতে পুজোর উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না দাস, কুনাল ঘোষ, শশী পাঁজা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট নেতা-নেত্রীরা। সেখান থেকে তিনি শেক্সপিয়ার সরণীর সার্বজনীন শ্যামাপূজার উদ্বোধনে যান।

    তিনি গিরীশ পার্কে সঞ্জয় বক্সীর এই পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে দীপাবলি উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে কয়েকটি বার্তা দেন। মমতা বলেন, ‘কালীপুজো মানে সম্প্রীতির উৎসব। ফুল অফ লাইট।’ সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে বলেন, ‘বাংলাই একমাত্র জায়গা, যেখানে কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে না, ভেজ (নিরামিষ) খান, না নন-ভেজ (আমিষ) খান। এখানে সবাই মিলেমিশে থাকি আমরা।’

    পাশাপাশি তিনি দীপাবলি উৎসবে পরিবেশ বান্ধব বাজি ফাটানোর আবেদন জানান। তাঁর আলোচনায় উঠে আসে ঘূর্ণিঝড় দানায় ক্ষয়ক্ষতির প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য় রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। প্রচুর ফসল ও ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। তবে মানুষের পাশে রয়েছে সরকার।

    তিনি জানবাজারের পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে কলকাতা ও রাজ্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে জানবাজারের ইতিহাস তুলে ধরে রানি রাসমণির প্রসঙ্গ আলোচনা করেন। এখানেও তিনি বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেন, ‘কেউ কেউ বাংলার বদনাম করছে। তাঁদের বলব বাংলাটাকে নিজের ভাবুন। আজও বাংলা যা পারে তা কেউ পারে না।’

    মমতা আরও বলেন, ‘কলকাতা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। বাংলার বেশিরভাগ জায়গাই গর্ব করার মতো। কিন্তু কেউ কেউ এটা নিয়ে আবার রাজনীতি করে। তখন ছন্দপতন ঘটে। আমি আবেদন করব, বাংলায় যাঁরা থাকবেন, তাঁরা বাংলাটাকেই নিজের ভাববেন।’

    মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আজ বাংলা এগিয়ে গেছে। কলকাতা অনেক এগিয়ে গেছে। আমি বলব, আমাকে বদনাম করতে গিয়ে বাংলাকে বদনাম করবেন না। বাংলা মাকে বদনাম করবেন না। স্বাধীনতা আন্দোলন বাংলা ছাড়া হত না। নব জাগরণ বাংলা ছাড়া হত না। শান্তিপ্রিয় জায়গা ছিল এই বাংলা। নেতাজি, রবিন্দ্রনাথ, গান্ধীজির প্রিয় জায়গা ছিল এই বাংলা। তাঁরাই আমাদের দিশা।’

    এরপর শেক্সপিয়ার সরণীর শ্যামা পূজার উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদল বিজেপি-র বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। তিনি গেরুয়া বাহিনীকে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ করে বলেন,’আমার একটা জিনিস শুনতে খারাপ লাগে, কেউ কেউ ভোট বাক্সে বাঙালি-অবাঙালি করে দেয়। এটা দয়া করে করবেন না। মনে রাখবেন, জায়গাটার নাম বাংলা। আমরা সবাই সবাইকে নিয়ে চলব।’

    এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিখ্যাত এই তিনটি পুজো ছাড়াও ভবানীপুর ভেনাস ক্লাব, শেক্সপিয়ার সরণির ইয়ুথ ফ্রেন্ডস ক্লাব ও ইন্ডিয়া ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধন করেন।

    মুখ্যমন্ত্রী ইয়ুথ ফ্রেন্ডস ক্লাবের কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে বলেন, ওই জায়গাটি তাঁর বিধানসভা (ভবানীপুর) এলাকার মধ্যে পড়ে। বাঙালি, গুজরাতি, মুসলমান, খ্রিষ্টান— সমস্ত ধর্ম এবং জাতির মানুষ মিলেমিশে থাকেন। কিন্তু ভোটের সময় বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ভাগাভাগির চেষ্টা করেন।

    মমতা বলেন, ‘শেক্সপিয়ার সরণি সর্বজনীন কালীপুজোটি যেখানে হচ্ছে, সেটা আমার বিধানসভা। আমি কৃতজ্ঞ যে, আপনারা আমাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু লোকসভায় “বুথ-টু বুথ” দেখেছি, ন’শো থাকলে আমরা একটা পেয়েছি। এটা কেন হবে? এখন তো বুথের রেজাল্ট দেখা যায়। দেখা যায়, কোন বুথে কে পাচ্ছেন, কে পাচ্ছেন না। এখানে কাউন্সিলর আমাদের, বিধায়ক আমাদের, সাংসদও আমাদের। বাংলা তাঁদের, যাঁরা বাংলার জন্য ভাবেন। বাংলা একমাত্র জায়গা, যেখানে কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করবে না, আপনি কোন ধর্মের? কেউ প্রশ্ন করবেন না, আপনার জাত নিয়ে, আপনি বাংলা ভালবাসেন কি না, আপনি ভেজ খান না নন ভেজ। এই রাজ্য আপনার। এখানে বসবাস আপনার অধিকারের মধ্যে পড়ে।’’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)