অনেকেই মানত করে মায়ের কাছে ভোগ পূজা এমনকি পাঁঠাবলি পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। লোকালয় থেকে অনেক দূরে ধানি জমি মেঠো আল পথ পেরিয়ে জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় মায়ের মন্দির। বছরে একবার এই পূজায় বহু মানুষের সমাগম হয় মন্দির চত্বরে। বাকি সময় মন্দির-চত্বর ফাঁকাই পড়ে থাকে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী শতাধিক বছরের পুরনো এই পূজা। মাঝে বহু বছর মায়ের পুজো বন্ধ ছিল। পরবর্তী কালে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে আজ থেকে ৬৯ বছর আগে ফের এই পুজো শুরু করেন রাজপুত বংশজাত ক্ষত্রিয় হরিচরন সিংহ ওরফে থেলুবাবু।
এলাকাবাসীদের মতে, মা বিবিহার জ্যান্ত কালী। এর প্রমাণও মিলেছে একাধিকবার। মায়ের মহিমায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনও এই পুজোয় সামিল হন। এখন থেলুবাবুর মৃত্যুর পর এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁর চার ছেলে।
স্বর্গীয় থেলুবাবুর বড় ছেলে মথুর সিংহ জানান,পারিবারিক নথি থেকে জানা যায়, আজ থেকে ২৫৩ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ দশরথ সিংহ প্রথম এখানে পঞ্চমুন্ডির আসন স্থাপন করে সেখানে মাটির ঘট বসিয়ে তন্ত্র সাধনা করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর উত্তরসূরি রাজকুমার সিংহ প্রথম মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি-সহ কালীপুজোর সূচনা করেন। সেই থেকে বছরের এই একটা দিন কার্তিকী অমবস্যার রাতে মা বিবিহারের পুজো হয়ে আসছে।
এই পুজো পারিবারিক হলেও এতে এলাকার সকলেই অংশ গ্রহণ করেন। পুজো হয় তন্ত্রমতে। পুজো করেন দৌলতপুরের মনোজ পান্ডে। পুজোর পরদিন মন্দির-সংলগ্ন পুকুরে মায়ের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
পার্শ্ববর্তী বরখইর গ্রামের আমিরুল ইসলাম বলেন, মা বিবিহার জ্যান্ত কালী। প্রচন্ড জাগ্রত। আমরা মুসলিম হলেও এই জ্যান্ত কালী মাকে ভক্তি করি। মন্দিরের সামনে দিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় মাকে করজোড়ে সালাম করি। দুপুরে ও সন্ধ্যায় ভয়ে এই মন্দিরের ধারে-কাছে ঘেঁষি না।
এই মন্দিরে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই, আলোও নেই। হিলি, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, মালদা থেকেও অনেকে পুজোর রাতে এখানে এসে পুজো দেন। এই কার্তিকী অমাবস্যার একটা রাতের পুজো শেষে এই ধু ধু প্রান্তরে একা গাছগাছালির ঘেরা ছমছমে পরিবেশেই মা বিবিহার নির্জনে একাকী অবস্থান করেন আবার পরের বছরের পুজো পাওয়ার অপেক্ষায়।