• পাহাড় ভালোবেসে বিয়ে করেননি, প্রৌঢ়ে গোরিচেন শৃঙ্গে মাল্যদান রানাঘাটের সুব্রতর
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: রানাঘাটের মধ্যবিত্ত ছাপোষা পরিবারের সুব্রত তখন কৈশোর বেলার গোধূলিতে। সপরিবারে দার্জিলিং ভ্রমণে গিয়ে প্রথম প্রেম খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনে। অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন পাহাড়, গিরিশৃঙ্গ এবং হিমালয়ের অলিগলি। যৌবনে এসে আর সহধর্মিনী খোঁজার চেষ্টা করেননি। পাহাড়কে ভালবেসেই প্রৌঢ় হয়েছেন আজ। অদম্য সেই ভালোবাসার টানেই সাধারণ এক স্কুলশিক্ষক চড়ে বসলেন ম্যাকমোহন ঘেঁষা গোরিচেন শৃঙ্গে। খাতায় কলমে, তিনিই পৃথিবীর প্রথম অসামরিক ব্যক্তি হিসেবে জয় করলেন অরুণাচলের এক অজেয় শৃঙ্গ। 


    অরুণাচলে ভারত-চীন সীমান্ত চিহ্নিত করেছে ম্যাকমোহন লাইন। দু’ দেশের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে সেখানে অসামরিক পর্বতারোহনের অনুমতি এতদিন ছিল না। বছরখানেক আগে ভারত সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরপর একাধিক দল লাগাতার চেষ্টা চালায় অসামরিকভাবে অজেয় থাকা গোরিচেন জয়ের। কিন্তু সবার চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি এভারেস্ট জয়ী বসন্ত সিংহরায়দের সঙ্গে এই শৃঙ্গ অভিযানের দলে ভিড়ে যান রানাঘাটের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খিড়কিবাগান লেনের বাসিন্দা সুব্রত ঘোষ। সুব্রতবাবু শিক্ষকতা করেন উত্তর ২৪ পরগনার কাপাসহাটি মিলনবিথী বিদ্যালয়ে। কিন্তু তাঁর জীবন আজ অনেকটা রূপকথার মতো। একসময় পাহাড়কে ভালোবেসে নিজের যৌবন সমর্পণ করেছিলেন। আজ সেই পাহাড়ই তাঁকে ফিরিয়ে দিচ্ছে উজাড় করা ভালোবাসা। এর আগেও তিনি মাউন্ট রামজ্যাক, মাউন্ট ব্ল্যাক পিক সহ একাধিক পাঁচ-ছয় হাজারি শৃঙ্গ জয় করেছেন। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন প্রায় ৬ হাজার ৫৩০ মিটার উচ্চতার মাউন্ট গোরিচেন। ১৪ অক্টোবর থেকে একাধিক ট্রায়াল দেওয়ার পর মূল আরোহন শুরু হয় ১৯ অক্টোবর। প্রথমে বেস ক্যাম্প। সেখান থেকে ক্যাম্প ওয়ান পৌঁছয় ছয় সদস্যের অভিযাত্রী দলটি। দুর্গম পথের শুরু এখান থেকেই। প্রায় ৪০০ মিটার রোপ ক্লাইম্ব করে তাঁরা নাগাল পান ক্যাম্প তিনের। ২০ অক্টোবর রাতে তিন শেরপাকে সঙ্গী করে শুরু হয় চূড়ান্ত সামিট ছোঁয়ার অভিযান। রাতের অন্ধকারই ছিল এই অভিযানের মূল চ্যালেঞ্জ। ঘুটঘুটে সেঅন্ধকারে আরও হাজার মিটার রোপ ক্লাইম্ব করতে হয় তাঁদের। ভোর ৬টা ২৫মিনিটে সম্পূর্ণ হয় শৃঙ্গ জয়। মোট পাঁচজন অভিযাত্রী সামিট ছুঁলেও গরিচেন শৃঙ্গে প্রথম অসামরিক বুটের দাগ পড়ে রানাঘাটের স্কুল শিক্ষক সুব্রত ঘোষেরই।


    রানাঘাটের খিড়কি বাগান লেনে তার বাড়িতে এখন উৎসবের মেজাজ। বাড়িতে বাবা, মা, ভাই, ভাইয়ের বউ এবং ভাইপো অধীর অপেক্ষায় সদ্য শৃঙ্গজয়ী ফেরার। ছেলের বিজয়ে গর্বিত মা কবিতা ঘোষ। তাঁর চোখে মুখে আনন্দের ছাপ। দুর্গম শৃঙ্গ জয় করে ছেলে বাড়ি ফিরছে। গর্ভধারিণীর অপেক্ষা করে থাকাটা একটু অন্য রকমের।
  • Link to this news (বর্তমান)