• ইতিহাস কথা বলে শান্তিপুরের লাহিড়ী বাড়ির মা কালীপুজোয়
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: কেবল রাস নয়, শান্তিপুরের প্রাচীন কালীপুজো দেখলেও চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। স্রেফ ইতিহাস পিপাসু হলেই অতীত ফিরে দেখতে কালীপুজোর গোটা দিনটা অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় গঙ্গার পূর্বপারের এই জনপদে। আর যদি কালী আরাধনার ইতিহাস খুঁজতে খুঁজতে একবার চলে আসা যায় ডাকঘর এলাকায়, তবে দ্রষ্টব্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে লাহিড়ী বাড়ির আড়াইশো বছরেরও বেশি প্রাচীন কালীপুজো। 


    সময়টা আনুমানিক ১৭৬৯ সাল। শান্তিপুর তখন জমজমাট আধা শহুরে জনপদ। বর্তমানে যেখানে ডাকঘর, সেখানেই তখন বসবাস করতেন গঙ্গাকান্ত লাহিড়ী। শান্তিপুরের একাধিক কালীপুজো দেখে তাঁর মনে বাসনা জাগে, মা কালীর আরাধনা করবেন তিনিও। ব্যাস, যেমন ভাবা তেমন কাজ। আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন গঙ্গকান্তবাবু। ফলে পুজো শুরু করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে শুরু করলেন কালী আরাধনা। তারপর থেকে এই পুজো জোড়া শতাব্দী পেরিয়ে, তৃতীয় শতাব্দীর পথে এগলেও কমেনি পুজোর জৌলুস। ফলে শান্তিপুর মানে ঠিক যতটা আগমেশ্বরী, চাঁদুনী, মহিষখাগি কালীর পুজো, ঠিক ততটাই লাহিড়ী বাড়ির কালীপুজোও। কিন্তু এ তো গেল পুজোর ইতিহাস। ব্যতিক্রমী নিয়মনীতিও বেশ বৈচিত্র্যময়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, মা কালীর আরাধনায় মিলেমিশে যায় ঘটি-বাঙালের ইলিশ-চিংড়ি। কারণ মায়ের পূজায় ভোগ আর যাই হোক, ইলিশ মাছের ঝোল আর সঙ্গে কচুর শাক দিয়ে চিংড়ি ছাড়া পূর্ণতাই পায় না। অর্থাৎ বলা ভালো, লাহিড়ী বাড়ির আবশ্যিক রীতিগুলির মধ্যে এই ইলিশ-চিংড়ি থাকতেই হবে। এছাড়া আর কী থাকে ভোগে? পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য জয়ন্ত লাহিড়ী বলেন, ওই দুই ধরনের মাছ তো আবশ্যই থাকতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন নিরামিষ পদ, মুগের ডাল, অড়হর ডাল। আর এই ভোগ রান্নায় একমাত্র বাড়ির মহিলা ছাড়া আর কারও হাত লাগানোর অধিকার নেই। তবে শেষ নয় এখানেই। পুজো দেখতে এলে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পরিপূর্ণ করে দেয় ধুনো পোড়ানোর রীতি। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠা মহিলা এই ধুনো পুড়িয়ে মা কালীর আরাধনা করেন। পশু বলি না হলেও, লাহিড়ী বাড়িতে কিন্তু বন্ধ হয়নি বলির প্রথা। কুমড়ো, আখ, কলা বলি দেওয়া হয় পুজোর মাঝে। তা উৎসর্গ করা হয় দেবীকে। 


    পারিবারিক ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায়, এক সময় লাহিড়ী বাড়িতে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে দুর্গাপুজোও হতো। কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন লাহিড়ী বাড়ির মূল উৎসবই কালীপুজো। তাই প্রাচীনত্বের তালিকায় স্থান পেলেও, আড়ম্বরে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি মা কালীর আরাধনায়। বর্তমানে এই পুজো পরিচালনার গুরু দায়িত্ব সামলান, অশোক লাহিড়ী, কিশোর লাহিড়ী এবং গোরাচাঁদ লাহিড়ী। জয়ন্তবাবুর কথায়, পুজোর দিন দুটোয় মা আসেন বাপের বাড়ি। তাই পরিবারের আট থেকে আশি, প্রত্যেকেই একপ্রকার দেবীর সেবায় নিয়োজিত থাকেন দু’দিন।   -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)