নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সোমবার সাতসকালে আনোয়ার শাহ রোডে গল্ফগ্রিন থানার পাশের বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এই ঘটনায় দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে গোটা সাতেক ঘর। আরও ছ’টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। এই ঘটনায় দু’জন গুরুতর জখম হয়েছেন বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে।
অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় এক যুবক মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে। তাঁর নাম রানা নস্কর। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটে আরও এক যুবকের। তাঁকে পিজির ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেখানেই তাঁদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দমকল ও পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, স্কুটারের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় সেটি ফেটে গেলে এই বিপত্তি হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ওই বস্তিতে। ফাটে গ্যাস সিলিন্ডার। ফলে, একের পর এক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, গোটা বস্তি প্রায় অঙ্গারে পরিণত হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে পোড়া জিনিসপত্র। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, এদিন সকাল ৬টা নাগাদ আচমকা বিস্ফোরণের মতো শব্দ হয়। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখি, বস্তিতে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় দমকলে। চলে আসে দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন। কিন্তু, তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। ছ’-সাতটি ঘর আগুনে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অলোকা দাস বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার শব্দ পেয়েছি। আগুনের শিখা দাউ দাউ করে উপরের দিকে উঠছিল। আমরা কোনওক্রমে ঘর ছেড়ে বেরতে পেরেছি। কিন্তু ঘরের কিছুই বাঁচানো যায়নি। যেটুকু টাকা-পয়সা ছিল, সবই আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, ওই বস্তির একটি ঘরে স্কুটারের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় সেটি ফেটে আগুন ধরে যায়। ওই ঘরেই গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। আগুনের তীব্রতায় সেটিতে বিস্ফোরণ হয়। সেখানেই শুয়ে ছিলেন রানা নস্কর নামের ওই যুবক। তাঁর মা ভোরবেলায় কাজে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দিয়ে যান। সেকারণে ঘর থেকে বেরতে পারেননি তিনি। ওই যুবকের বউদি বলেন, ‘রানা উপরের তলায় শুয়ে ছিল। অন্যান্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেও ও নীচে নামতে পারেনি।’ ছেলে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কথা শুনে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন মা নীলিমা নস্কর। বাচ্চা কোলে নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন রানার বোনও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মৌসুমি দাস বসেন, অবৈজ্ঞানিকভাবে স্কুটারের ব্যাটারিতে চার্জ দিতে গিয়েই এই বিপত্তি। আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে এক যুবকের মাথা ফেটে যায়। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। ভস্মীভূত বাড়িগুলি বানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। - নিজস্ব চিত্র