মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার ঘটনায় রবিবারই তন্ময় ভট্টাচার্যকে সাসপেন্ড করেছিল সিপিএম। হেনস্থার ঘটনার প্রেক্ষিতে রবিবার তন্ময়কে থানায় ডেকে পাঠিয়েছিল বরানগর থানার পুলিশ। সোমবারও তাঁকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। তন্ময়ের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অসত্য।
তন্ময়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দলের ইন্টারন্যাল কমপ্লেন কমিটি (আইসিসি)–তে পাঠিয়ে দিয়েছে সিপিএম। এই ঘটনায় এই কমিটিই তদন্ত করবে। বাংলায় সিপিএমের এই কমিটির মাথায় রয়েছেন বর্ধমানের মহিলানেত্রী অঞ্জু কর। সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন তন্ময় ভট্টাচার্য। দলের এই সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘একটি মেয়ে অভিযোগ করা মানেই যে সাসপেন্ড করতে হবে, দল যদি এটা মনে করে, তাহলে ঠিক কাজ করেছে। কাল অন্য কারও বিরুদ্ধে যদি কোনও মেয়ে অভিযোগ করে তাঁকেও সাসপেন্ড করবে। এই রুটিনে যদি দল চলে, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি আশা করেছিলাম, দল আমার কথা শুনবে। রাজ্য সম্পাদক হোয়াটসঅ্যাপে কিছু জানতে চেয়েছিলেন। আমি জানিয়েছিলাম। তারপরও এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের পরিবার বামপন্থী হিসেবেই পরিচিত। আমি মাথা উঁচু করে বামপন্থার সঙ্গে ছিলাম। মাথা উঁচু করেই থাকব। যদি কেউ মনে করেন, আমাকে হেনস্থা করে আমার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারবেন, তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। অভিযোগটা শুনে আমি স্তম্ভিত। একটা কুরুচিকর, পরিকল্পিত কুৎসা।’
রবিবার ফেসবুক লাইভ করে এক মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেছিলেন, ইন্টারভিউয়ের আগে তন্ময় ভট্টাচার্য তাঁর কোলে বসে পড়েন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই সাসপেন্ডেড সিপিএম নেতা। তাঁর দাবি, ওই মহিলা সাংবাদিকের শরীরের ওজন ৪০ কেজি। আর তাঁর ওজন ৮৩ কেজি। তাঁর প্রশ্ন, তিনি কোলে বসে থাকলে ওই সাংবাদিক সুস্থ থাকতে পারতেন?
তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই সুর চড়িয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তন্ময়কে গ্রেপ্তারের দাবিও তুলেছেন তিনি। আরজি কর কাণ্ডে আন্দোলনে যারা শামিল হয়েছিলেন তাঁরা সাংবাদিককে শ্লীলতাহানির ঘটনায় আন্দোলন করবেন কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল।
অপরদিকে এ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ভাইপোর বিদেশ থেকে নিয়ে আসা আরও উন্নতমানের ওয়াশিং মেশিনে ধোলাই হয়ে যাবেন তন্ময় ভট্টাচার্য।’ এখানে ভাইপো বলতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বুঝিয়েছেন শুভেন্দু। কোনও মহিলা এরকম অভিযোগ করলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
মহিলা সাংবাদিককে শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই মুখ খোলেন বামনেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি জানান, ওই মহিলার ফেসবুক লাইভ তিনি দেখেছেন। তাঁর খারাপ লেগেছে। দলের কিছু নিয়ম ও প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রবিবার সেলিম জানিয়েছিলেন, তন্ময়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষ করার জন্য আইসিসি–কে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। আইসিসি–কে কত সময় দেওয়া হবে তা বুধবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একটি বৈঠকে ঠিক করা হবে। সিপিএম সূত্রে খবর, আইসিসি–র কাছেও অভিযোগ জানানোর জন্য দলের তরফে ওই মহিলা সাংবাদিককে বার্তা দেওয়া হবে।