পুজোর আগে বৃষ্টির জেরে মাটি শুকোয়নি, নাওয়া খাওয়া ভুলে কাজে মেতেছেন শিল্পীরা
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, বহরমপুর: বাড়ির উঠানে বসে দিদা, ঠাকুমার হাতে মাটির প্রদীপ তৈরির দিন আজ অতীত হয়ে গিয়েছে। মাঝে প্রায় তিন চার দশক দীপাবলির উৎসবে মাটির প্রদীপ আলো হারিয়েছিল টুনি, এলইডির দাপটে। মৃৎশিল্পীদের হাত ধরে ফের বাজার দাপাতে শুরু করেছে মাটির প্রদীপ। তবে সেই মাটির প্রদীপে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, রঙের বাহার। দীপাবলির আগে মাটির প্রদীপ তৈরির ব্যস্ততায় মৃৎশিল্পীরা অন্য কাজে হাত দিতেই পারেন না। তবে এবার ডানার প্রভাবে মাটির প্রদীপ শুকাতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয়েছে মৃৎশিল্পীদের।
একটা সময় ছিল যখন দীপাবলি মানেই প্রতিটি বাড়ির উঠান, তুলসীতলা, ঠাকুর ঘর, দালান, গোয়াল ঘরে মাটির প্রদীপে সর্ষের তেলে চোবানো সলতে জ্বলত। কালীপুজোর দিন কয়েক আগে থেকেই বাড়িতে বাড়িতে প্রদীপ বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যেত। দুপুরের খাবার খেয়েই দিদা, ঠাকুমারা এক তাল মাটি নিয়ে বসে পড়তেন প্রদীপ বানাতে। বাড়ির কচিকাঁচারা সেই প্রদীপ আলতো হাতে সযত্নে তুলে রোদে শুকাতে দিত। অনেকে আবার রোদে শুকানো প্রদীপ কাঠের আঙ্গারে পুড়িয়ে নিত। তাতে হালকা রঙও আসত। এখন সেই সব দিন অতীত হয়ে গিয়েছে। আজ আর কোনও বাড়িতে মাটির প্রদীপ গড়ার চল নেই। তবে দীপাবলিতে মাটির প্রদীপ হারানো দিন ফিরে পেয়েছে। একসময় প্রদীপের জায়গা দখল করেছিল মোমবাতি। পরে মোমবাতিকে ঠেলে সেই জায়গার দখল নিয়েছিল টুনি। বছর কুড়ি ধরে দীপাবলির আলোর বাজার দখল করে রেখেছিল চীনারা। রঙ-বেরঙের এলইডি লাইট সহ রকমারি চীনা আলো দীপাবলির আলোর বাজারে অন্য কাউকে প্রবেশের সুযোগ দেয়নি। চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের তিক্ততা হতে শুরু করায় বহু ভারতীয় চীনা দ্রব্য বর্জন করতে শুরু করে। দীপাবলির আলোর বাজারও ক্রমশ চীনাদের দখল থেকে সরতে শুরু করে। ফের বাজার আসতে শুরু করেছে মাটির প্রদীপ। এবার মাটির প্রদীপে বাহারও আসতে শুরু করে। রঙ করা একমুখী, পঞ্চমুখী থেকে শুরু করে গাছা প্রদীপ, আলপনা দেওয়া প্রদীপ বাজারে এসেছে মৃতশিল্পীদের হাত ধরেই। আলোর উৎসবে প্রদীপের বরাত নিতে পারছেন না মৃৎশিল্পীরা। বহরমপুর থানার বালিরঘাট পালপাড়ার মৃৎশিল্পী দীনেশ পাল বলেন, মাঝে বহুদিন মাটির প্রদীপের চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। দিন বদল হয়েছে। আবার মানুষ মাটির প্রদীপের দিকেই ঝুঁকতে শুরু করেছে। আমরাও মাটির প্রদীপে নানা চমক আনার চেষ্টা করছি। চৈৎপুরের মৃৎশিল্পী অশোক পাল বলেন, দীপাবলির একমাস আগে থেকেই এখন প্রদীপের বায়না আসতে শুরু করে।
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক গৃহস্থও প্রদীপের অর্ডার দেন। দীপাবলির রাতের চেহারাটাই বদলে দিয়েছে মাটির প্রদীপ। এখন বাড়ির কচিকাঁচারা হাতে সরর্ষের তেলের পাত্র নিয়ে রাতভর মাটির প্রদীপের আলো জাগিয়ে রাখে। বুক জ্বলা প্রদীপের সলতে বদল করে তারাই। অমাবস্যার রাতে মাটির প্রদীপ আলো ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু, প্রদীপের তলায় অন্ধকার থেকেই যায়।