• বৃষ্টিতে ফলন কমতেই বাজারে দাম আগুন, কালীপুজোয় রজনীগন্ধাকে টেক্কা দিয়ে ‘এলিট’ জবা
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ‘ডানা’র ঝাপটায় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি সইতে হয়নি নদীয়া জেলাকে। কিন্তু, তাই বলে এক্কেবারে নিস্তার যে মিলছে না, তার স্পষ্ট ছবি দেখা গেল রানাঘাটের বড় বড় ফুল বাজারগুলিতে। আগুন দামে এখন হাত দেওয়াই দায় জবায়। ফলে কালীপুজোর প্রাক্কালে রজনীগন্ধাকে টেক্কা দিয়ে ‘এলিট’ হয়ে উঠেছে রক্তবর্ণা ফুলটি। দামের ঠেলায় বাজারে অগ্রিম ‘বুকিং’ করতে এসে এখন হোঁচট খেতে হচ্ছে পুজো উদ্যোক্তাদের।


    গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ডানা ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছে ওড়িশা এবং বঙ্গ উপকূলে। তার প্রত্যক্ষ রোষ থেকে অবশ্য নিস্তার মিলেছে নদীয়ার। কিন্তু, পরোক্ষ প্রভাবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অতিবৃষ্টির কারণে ফুল চাষে তার প্রভাব পড়েছে। তবে জবা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত সবচেয়ে বেশি। ঠিক কালীপুজো যখন দুয়ারে, তখনই বৃষ্টির কারণে কমেছে ফলন। জলের কারণে অনেক কুঁড়িই অসময়ে ঝরে গিয়েছে। চাহিদার সঙ্গে এখন জোগানের সামঞ্জস্য রাখাই দায় হয়ে উঠেছে। এর প্রভাবেই পুজো যত এগিয়ে আসছে, ততই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে জবার দাম। অনেকেই আবার কালী পুজোয় বিক্রি করবেন বলে, অগ্রিম ‘অর্ডার’ নিয়ে রাখছেন। ফলে ঘাটতি হচ্ছে দৈনিক জোগানেও। সোমবার ধানতলা ও নোকাড়ি বাজার বলছে, দুর্গাপুজোর তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গিয়েছে দাম। এই মুহূর্তে ফোটা জবা বিক্রি হচ্ছে ২০০ পিস ৮০টাকায়। আর ২০০ পিস কুঁড়ির দাম ১৬০টাকা। অথচ চাষিরা জানাচ্ছেন, গ্রীষ্মকালে এই জবাই হাজারে দাম থাকে ৫০ টাকা। শীতকালে অবশ্য দাম স্বাভাবিক নিয়মেই বেশি থাকে। ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে, এই জবার দাম থাকবে ৩০০ টাকা প্রতি হাজার পিস। অথচ গত বছরের হিসেব বলছে, ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হাজার হিসেবে বিক্রি হয়েছে জবা। ফলে জবা কিনতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি পুজো উদ্যোক্তাদেরও। 


    নোকাড়ি স্কুল পড়ার ফুলচাষি তারক বিশ্বাস বলেন, যেভাবে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হল তাতে ফলনের ক্ষতি হয়েছে। গাছের গোড়ায় গোড়ায় জল জমেছিল। স্বাভাবিকভাবেই আশাপ্রদ ফলন হয়নি। তার জন্য দাম তো বাড়বেই। কালীপুজোর দিন এই জবার দাম সর্বোচ্চ কত ছুঁতে পারে? ফুল চাষি সলিল বিশ্বাস বলেন, এই বছর বাজারের যা অবস্থা, তাতে কালীপুজোর দিন জবাফুল দেড় টাকা পিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ অনেকেই অগ্রিম বুকিং করে রাখছেন। 


    ফলে পুজোর দিন অথবা তার আগের দিন বাজারে জবা পাওয়া খুব মুশকিল। যেহেতু আমাদের এখানে কোথাও কোল্ড স্টোরেজ নেই, তাই আমরা চাইলেও কুঁড়ি আগে থেকে সংরক্ষণ করতে পারব না। প্রসঙ্গত, নোকাড়ি বাজারের মতোই অবস্থা ধানতলা বাজারেরও। সেখানেও সোমবার সকালে আগুন দামেই বিকিয়েছে জবাফুল। দুর্গাপুজোয় ফি বছর ফুল বাজারগুলিতে পদ্ম নিয়ে রীতিমতো টানাটানি চলে। বৃষ্টির কারণে চলতি বছর অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় কালীপুজোর ‘পদ্ম’ জোগাতেও এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)