ফসল রক্ষা করতে গিয়ে নাক খোয়াতে হয় দেবীকে, নডিহার চিড়াবাড়িতে পুজো হচ্ছে নাক কাটা মা কালীর
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
পিনাকী ধোলে, পুরুলিয়া: নাক কাটা কালী–নাম শুনে আশ্চর্য হলেও দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে পুরুলিয়া শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নডিহা চিড়াবাড়িতে এই রূপেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী। কাটা নাকের মাতৃমূর্তির পুজোয় আজও ঢল নামে ভক্তদের। ঐতিহ্যের টানে আজও পুরুলিয়া ছাড়াও সুদূর ঝাড়খণ্ড থেকে বহু মানুষ এই নাক কাটা কালীর পুজোয় ভিড় করেন।
কথিত আছে, ডাকাত দলের আক্রমণের হাত থেকে এলাকার চাষিদের সোনার ফসল রক্ষা করতে গিয়েই নাক খোয়াতে হয় দেবীকে। ডাকাতদলের তরোয়ালের আঘাতে নাক কেটে যায় মায়ের। সেই থেকেই এলাকায় পূজিত হয়ে আসছেন নাক কাটা কালী। জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় এই এলাকা ছিল নির্জন। জনমানবহীন। এলাকাজুড়ে ছিল বিঘার পর বিঘা ধান জমি। তারই মাঝে ছিল কালী বাড়ি। সেখানেই এলাকার মানুষ কালীপুজো করতেন। বিরাট আকৃতির পাথরের কালী মূর্তি পুজো করা হতো। কথিত আছে, স্বয়ং মা কালী নাকি গরিব মানুষদের সেই ধান পাহারা দিতেন। একসময় এই ধান খেতের সমস্ত ফসল পেকে যাওয়ার পরই ডাকাত দলের আগমন হয়। তারা সমস্ত ধান চুরি করতে আসে। ধানের জমিতে ডাকাত পড়ার খবর স্বপ্নাদেশে গৃহস্থদের জানিয়ে দেন দেবী। সেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে ছুটে আসেন চাষিরা। চাষিদের তাড়া খেয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। কিন্তু, তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে যান। পাকা ধান কেটে নিয়ে যেতে না পারার ক্ষোভে তরোয়াল দিয়ে সেই পাথরের মূর্তিতে আঘাত করে ডাকাতরা। টুকরো টুকরো করে দেয় মায়ের মূর্তি। কেটে দেওয়া হয় মায়ের নাক। তারপর থেকেই সেই নাক কাটা অবস্থাতেই মাযের পুজো হয়ে আসছে এলাকায়।
এখনও সেই টুকরো মূর্তির বিভিন্ন অংশ পড়ে রয়েছে চিড়াবাড়ি কালী মন্দিরে। মন্দির চত্বরে রয়েছে বিশালাকার পায়ের অংশও। সেগুলিরও পুজো হয়। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই পুজো। ফসলরক্ষার জন্য নাক কাটা যাওয়ার জন্য দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তে। কালী পুজোর দিন নাক কাটা কালীমন্দিরে নজরকাড়া ভিড় হয়। মন্দিরে বলি হয়। সেই সঙ্গে পুজোর পরের দিন বলির মাংস দিয়ে খিচুড়ি হয়। যে প্রসাদ পাওয়ার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায় মন্দিরে।