• ধনতেরসের ব্রত পালনে উৎসাহ বাড়ছে বাঙালির
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • অভিষেক পা, বহরমপুর: বাংলার সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়েছে ‘অবাঙালি’ ধনতেরাস। জাঁকজমকভাবে এখন বাঙালি বধূদের এই ব্রত পালনের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশীর দিন ব্রতটি পালিত হয় বলে, ব্রতের নাম ধনতেরাস। নামটি অবাঙালি হলেও এই সময় রীতি মেনে ধনদেবীর আরাধনা বাংলাতেও প্রচলিত। গৃহস্থের ধনবৃদ্ধির কামনায় জাঁকজমকভাবে ব্রত পালন করছেন অনেকেই। ধন সমৃদ্ধির আশায় এই সময়ে সোনার গয়না কেনার হিড়িক দেখা যায় সর্বত্র। বহরমপুরের সোনার দোকানগুলি সেজে উঠেছে। প্রতিটি দোকানে বাড়তি ভিড় চোখে পড়ছে। ধনতেরাসে মূল্যবান ধাতু কিনতে দিনদিন মানুষের উৎসাহ বাড়ছে। 


    অন্যান্য ব্রতের মতো ধনতেরাস ব্রতেরও একটি কাহিনী আছে। এই কাহিনী অনুসারে বহু বছর পূর্বে ভারতের কোনও এক রাজার কোষ্ঠী গণনা করে জ্যোতিষী বলেন তাঁর পুত্র বিবাহের চতুর্থ দিন সর্পদংশনে মারা যাবেন। পুত্রের বিবাহের পর একথা জানলেন নববধূ। কোনওমতে সেই নব বিবাহিত বধূ, অন্য মতে রাজা স্বয়ং নির্ধারিত দিনে আদেশ দিলেন প্রজাদের প্রত্যেকের গৃহে আজ আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। রাজা নিজের প্রাসাদে সর্বত্র আলোর মালা দিয়ে সজ্জিত করলেন, তারসঙ্গে চাল ও ফুল চারিদিকে ছড়িয়ে দিলেন। এদিকে নব বিবাহিত যুবরানি তাঁর গহনাগুলি স্তূপ করে দুয়ারের সামনে রেখে দিলেন। ধীরে ধীরে সময় ঘনিয়ে এল, সর্পরূপ মৃত্যুদেবতা রাজ্যে প্রবেশ করে মুগ্ধ হলেন। এতসব আয়োজন তাঁরই জন্য? তুষ্ট মৃত্যুদেবতা যুবরানির রাখা গহনার সম্মুখে এসে বললেন, এই আয়োজনে আমি তুষ্ট হয়েছি। তুমি আমার কাছে বর গ্রহণ করতে পারো। নব বিবাহিত যুবরানি রাজপুত্রের আয়ুবৃদ্ধির বর চেয়ে নিলেন। সেই থেকে এই দিনটি দীপমালায় প্রজ্জ্বলিত করে রাখার বিশেষ দিন। এই দিনে রানি নিজের গহনা দিয়ে যমরাজকে তুষ্ট করেছিলেন, সেই কথা স্মরণ করে গহনা ক্রয়ের এত সমারোহ।


    পাশাপশি, কালীপুজোর ক্ষণটিতে লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদলাভের জন্য ধনদেবীর আরাধনা আমাদের বাংলার সংস্কৃতির মধ্যেই ছিল। এখনও অনেক পরিবারে কালীপুজোর দিন লক্ষ্মীপুজো করার রীতি প্রচলিত আছে। কালীপুজোর আগে চতুর্দশী তিথিটি হিন্দু পুরাণে এক উল্লেখযোগ্য তিথি। বলা হয়, এই দিন শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। নরকাসুরের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার আনন্দে দেবতারা আলোর মালা দিয়ে চারিদিক সজ্জিত করেন। আর এই তিথি নরক চতুর্দশী তিথি রূপে প্রসিদ্ধ লাভ করে। 


    আবার পুরাণ অনুসারে, সমুদ্রমন্থনের সময় সমুদ্র থেকে চোদ্দোটি রত্ন উঠে আসে এবং তারসঙ্গে চতুর্দশ কলস নিয়ে আবির্ভূত হন ধন্বন্তরী। তার কিছুদিন পর লক্ষ্মী উত্থিত হন। তাই চতুর্দশী তিথির এত মাহাত্ম্য। বাঙালিরা অবশ্য এই তিথিকে ভূত চতুর্দশী তিথি বলে থাকে। মূলত, ধন্বন্তরীর দু’দিন পরে সমুদ্র থেকে উঠে আসেন লক্ষ্মীদেবী। তাই দু’দিন পর তাঁর পুজো হয়। দেবীলক্ষ্মীর সঙ্গে আয়ুর্বেদ ঔষধির দেবতা ধন্বন্তরির স্মৃতিও এখন সংস্কৃতির আঙিনায় জেগে আছে। ভূত চতুর্দশীর দিন যে চোদ্দো শাক খাওয়া তার মধ্যে স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশল নিহিত আছে। অনেকে বলেন, বাজি পোড়ানোর মধ্যে জীবাণু ধ্বংসের কারণও নিহিত আছে। তাই দিনে দিনে এই তিথির মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ছে বাঙালিদের মধ্যে। মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে ধনতেরাস কিংবা দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজো।


    বহরমপুরের এক পুরোহিত বীতশোক পাণ্ডে বলেন, ধন দৌলতের আশায় অনেকেই দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজো করেন। এই রীতি বহুদিনের। তারসঙ্গে ধনতেরাসের ব্রত পালনেও এখন বাঙালি মা বোনদের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)