• নৌকাডুবি থেকে রক্ষার পর স্বপ্নাদেশে শুরু মৎস্যজীবীদের নায়েকালীর পুজো
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • সৌমিত্র দাস, কাঁথি: দীঘা লাগোয়া পূর্ব মুকুন্দপুর গ্রামে প্রায় ৩০০বছরের  প্রাচীন নায়েকালী মন্দিরের পুজোর সঙ্গে এলাকার মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে। ‘নায়েকালী’ অর্থাৎ নৌকার উপর মা কালীর অধিষ্ঠান। এই মন্দিরে ছোট নৌকার উপর পাথরের কালীমূর্তি রয়েছে। নায়েকালী মন্দিরে সিংহবাহিনী দুর্গাপ্রতিমাও রয়েছে। তাই এখানে দুর্গা ও কালী একসঙ্গে পূজিতা হন। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর সময় বিশেষ পুজো করা হয়। তবে নায়েকালীর বার্ষিক বড় পুজো দোলপূর্ণিমার সময় হয়।


    সারা বছরই স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দীঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকরা নায়েকালী মন্দির দর্শনে আসেন। তাই এই জায়গাকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা উদ্যোগী হয়েছে। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য থ্রি-ডি থিয়েটার, লেজার লাইট শো, ড্যান্সিং  ওয়াটার ফাউন্টেন সহ অন্য পরিকাঠামো গড়া হচ্ছে। মন্দির সংলগ্ন ঝিলে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। প্রায় ১৫কোটি টাকায় এই পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।  উন্নয়ন সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা কাঁথির মহকুমা শাসক সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, নায়েকালী মন্দিরের পর্যটন ও বিনোদনের পরিকাঠামো গড়ার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।


    দীঘা-শৌলা মেরিন ড্রাইভ রাস্তার পাশেই নায়েকালী মন্দির। দীর্ঘ সময় ধরে এখানে ছোট মন্দির ছিল। কয়েকবছর আগে গ্রামবাসীদের আর্থিক সহায়তায় সুদৃশ্য ও সুউচ্চ সাদা রঙের মন্দির তৈরি হয়। খাল, জলাভূমি ও গাছগাছালিতে ভরা মন্দিরের আশপাশের পরিবেশও মনোরম। আগে এই এলাকা ঝোপজঙ্গলে ঘেরা ছিল। পদিমা-২ পঞ্চায়েত ১০০দিনের কাজের মাধ্যমে জায়গাটি সাফাই করে। তারপর ৩০লক্ষের বেশি টাকা খরচে সাজানো-গোছানো পার্ক গড়ে তোলা হয়।


    এলাকার প্রবীণরা জানালেন, বহুকাল আগে একবার মৎস্যজীবীদের একটি নৌকা মাছ ধরতে যাওয়ার পথে শঙ্করপুর মোহনায় প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে। তখনকার দিনে তালগাছের কাণ্ড দিয়ে তৈরি ডিঙি নৌকায় মাছ ধরা হতো। বিপদে পড়ে মা কালীকে স্মরণ করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। কথিত আছে, এরপরই তাঁরা আশ্চর্যনজনকভাবে নৌকাডুবি থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। তারপর দেবী নৌকার মাঝিকে স্বপ্নাদেশ দেন, ‘এখানেই আমার প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু কর’। মাঝি এই জঙ্গলময় এলাকায় খড়ের চালা দেওয়া মাটির ঘরে মা কালীকে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে রামনগরের বালিসাইয়ের বারভুঁইয়াদের আমলে পাকা মন্দির তৈরি হয়। সেই মন্দির অবশ্য বহুকাল আগে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তারপর কয়েক দশক ধরে টালির চালার ছোট মন্দির ছিল। পরে বড় মন্দির তৈরি হয়। স্থানীয় পণ্ডা পরিবার বংশানুক্রমে মন্দিরে সেবা করে আসছে। প্রতিদিন নিত্যপুজোয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন। ক্ষীরভোগ ও অন্নভোগ দিয়ে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।


    মন্দির পরিচালন সমিতির সম্পাদক তপন কর বলেন, বহু মানুষ এখানে মানত করে পুজো দেন। দীঘা-শঙ্করপুর এলাকার বেশিরভাগ ট্রলার-নৌকা নায়েকালী মন্দিরে পুজো দিয়েই সমুদ্রযাত্রা করে।
  • Link to this news (বর্তমান)