• ৪৯ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ, গোকুলনগর পঞ্চায়েতে স্পেশাল অডিট
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নন্দীগ্রাম: প্রায় ৪৯লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ। সেই অভিযোগে পুলিস মোতায়েন করে সোমবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে স্পেশাল অডিট করল ডিস্ট্রিক্ট লেভেল কমিটি। বেশকিছু নথিতে গরমিল ধরা পড়েছে। সেইসব বিল, ভাউচারের বান্ডিল গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে জেলাশাসক অফিসে আনা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ১৯অক্টোবর ওই পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি নীলরতন দাসকে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। এতবড় আর্থিক দুর্নীতিতে পঞ্চায়েত প্রধান ও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টের ভূমিকা কী ছিল সেটা আতশকাচের তলায়। গ্রাম পঞ্চায়েতের বিল, ভাউচার প্রভৃতি জেলাশাসক অফিসে আরও একদফায় স্ক্রুটিনি হবে। 


    সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন অফিসার দেবদুলাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে আট সদস্যের টিম গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে ঢোকে। সঙ্গে ছিলেন নন্দীগ্রাম-১বিডিও সৌমেন বণিক। অডিট শুরু হওয়ার মুহূর্তে বিডিও নিজের অফিসে ফিরে যান। বিল্ডিংয়ের দোতলায় পঞ্চায়েত অফিস। সেখানে পৌঁছে জেলা পঞ্চায়েত দপ্তরের অফিসার-কর্মীরা প্রথমে পঞ্চায়েত কর্মীদের ডেকে নেন। তারপর গত এক বছরের যাবতীয় বিল, ভাউচার ও ডিজিটাল সিগেনচার সার্টিফিকেট(ডিএসসি) তলব করা হয়। পঞ্চায়েত কর্মীদের বক্তব্য শোনার পর ডিস্ট্রিক্ট লেভেল অডিট টিম প্রধান দীনবন্ধু মণ্ডল ও উপপ্রধান নমিতা গিরিকে ডেকে পাঠায়। ওই টিমের কাছে গ্রাম পঞ্চায়েতে আর্থিক অনিয়মের ঘটনা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে। 


    এদিন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কোলাপসিবল গেটের সামনে পুলিস দাঁড়িয়েছে। পঞ্চায়েত কর্মীরা ছোটাছুটি করে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিল জোগাড় করে হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে যাচ্ছেন। স্পেশাল অডিটের জন্য টিম গঠনের সময়ই অতিরিক্ত জেলাশাসক(পঞ্চায়েত) ওই প্রধানকে চিঠি দিয়ে যাবতীয় বিল, ভাউচার রেডি রাখার পাশাপাশি নিজেকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরও এদিন টিম ঢুকে অডিট করার সময় বিল জোগাড় করতে ছোটাছুটি পড়ে গিয়েছিল। বিকেল ৩টে নাগাদ এদিন অডিট শেষ করে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল কমিটি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস ছাড়ে। তবে, বিজেপির উপপ্রধান নমিতা গিরির নেতৃত্বে ১০জন পদ্মপার্টির পঞ্চায়েত সদস্য আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তাঁদের কাছে থাকা নথি টিমের হাতে তুলে দেন। এছাড়াও পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেত্রী তথা তৃণমূলের সদস্যা নিবেদিতা ভুঁইয়া দুর্নীতির স্বপক্ষে বেশকিছু নথি দিয়েছেন।


    উল্লেখ্য, ২০২৩সালের ১৪আগস্ট ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যভার গ্রহণ করে বিজেপি। মোট ২০জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে বিজেপির ১৬জন এবং তৃণমূলের চারজন। বোর্ড গঠনের পর থেকেই পঞ্চায়েতে পুকুরচুরি হয় বলে অভিযোগ। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৩৫লক্ষ টাকা হাপিশ। এনিয়ে প্রধান পঞ্চায়েতের সেক্রেটারির বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। তারভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে, নিজস্ব তহবিলের ১৪লক্ষ টাকার হিসেব নেই। এভাবে মোট ৪৯লক্ষ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনায় প্রধান ও এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন অফিসার বলেন, সোমবার স্পেশাল অডিট হয়েছে। আমরা কিছু নথি সংগ্রহ করেছি। উপপ্রধান নমিতাদেবী বলেন, আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় কারা জড়িত সেটা সামনে আসা উচিত। পঞ্চায়েত প্রধান দীনবন্ধুবাবু বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে স্পেশাল অডিট হচ্ছে। আমাদের আশা, সত্যটা ওঠে আসবে।- নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)