• ‘কোনও শক্তিই আমাদের বিভেদ করতে পারবে না’, কালী প্রতিমা তৈরি করছে ভাতারের শেখ জাহাঙ্গির
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: একমনে কালীমূর্তি গড়ছেন শেখ জাহাঙ্গির। মাটির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন রংয়ের কাজ চলছে। তুলি ধরেছেন তিনি। এক দৃষ্টিতে মায়ের চোখ আঁকছেন। সঙ্গে তিনি দৃষ্টি খুলে দিচ্ছেন সমাজের। সম্প্রীতির দৃষ্টি। ভ্রাতৃত্ববোধের দৃষ্টি। ভাতারের সিমডাল গ্রামে বছর ৬০-এর ওই বৃদ্ধের বাড়ি। নিজে ধর্মপ্রাণ। রোজ নিয়ম করে নামাজ পড়েন। মসজিদেও যান। আবার অন্য ধর্মকে সম্মান দিতেও জানেন। পেশার তাগিদে তিনি মূর্তি তৈরির কাজ করলেও সমাজে বৃহত্তর বার্তা ছড়াতেও চাইছেন। তিনি বলেন, হানাহানি, বিভাজন কোনওকিছুই ভালো লাগে না। সবাই মিলেমিশে থাকার মধ্যে আনন্দ অন্যরকম। সেটা যেন বজায় থাকে। কালী ছাড়াও লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরি করেছি। অন্য মূর্তি তৈরি করতেও অসুবিধা নেই। তাছাড়া সংসার চলবে কীভাবে? শারীরিক অক্ষমতায় অন্য কাজ করতে পারি না। মূর্তি তৈরি করতে অসুবিধা হয় না। প্রায় চার মাস ধরে বর্ধমানের শ্যামলালে একটি কুমোরটুলিতে মূর্তি তৈরির কাজ করছি। 


    জাহাঙ্গির সাহেবের দুই ছেলে, এক মেয়ে। দিনমজুরি করেই তাঁর সংসার চলে। দুই ছেলেরও স্থায়ী কোনও কাজ নেই। তাঁরাও যখন যা পান তখন সেই কাজ করেন। নিজের রোজগারেই তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আগে কঠোর পরিশ্রম করতে পারতেন। এখন বয়সের ভারে তা হয়ে ওঠে না। জাহাঙ্গির সাহেব বলেন, কুমোরটুলিতে কাজ করে দিনে ৪০০টাকা পাই। আগে শুধু মাটির কাজ করতাম। এখন সবই পারি। মায়ের মূর্তি গড়তে পারি। রং করতেও পারি। গ্রামের সকলেই আমাকে এই কাজ করার সম্মতি দিয়েছেন। যতদিন পারব, এই কাজ চালিয়ে যাব। ওই কুমোরটুলির এক শিল্পী বলেন, উনি কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শিখে গিয়েছেন। লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরি করে তাঁর কাজের হাতে খড়ি। খুব সুন্দর লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরি করেছেন। এখন কালী প্রতিমা তৈরি করছেন।


    হাতে আর বেশি সময় নেই। বৃষ্টির জন্য কিছুদিন কাজ থমকে গিয়েছিল। মাটি শুকাতে সমস্যা হয়েছিল। সোমবার থেকে রোদের তেজ বেড়েছে। এখন তাই জাহাঙ্গিরের হাতে সময় নেই। 


    তিনি সকাল থেকেই কাজে নেমে গিয়েছেন। একের পর এক মূর্তি রং করছেন। শ্যামা মা জগৎ জননী। তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করেন। এমনই ধারণা রয়েছে ভক্তদের। জাহাঙ্গির সাহেবও বিশ্বাস করেন, অশুভ শক্তির বিনাশ হবেই। ভ্রাতৃত্ববোধই শেষ কথা বলবে। তিনি বলেন, আমরা যে যার ধর্ম পালন করি। বহু বছর ধরেই একসঙ্গে রয়েছি। কোনও শক্তিই বিভেদ করতে পারবে না। কথা বলার মাঝেই মায়ের দৃষ্টিদান করলেন তিনি। 
  • Link to this news (বর্তমান)