• কেঁউদির যোগমায়ার পুজো হয় শাক্ত ও বৈষ্ণবমতে
    বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • প্রদীপ্ত দত্ত, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের পূর্বে প্রসারিত জঙ্গলমহল। এই জঙ্গলভূমী একসময় তন্ত্রসাধকদের সাধনাস্থল ছিল। বৈষ্ণব ধর্মেরও প্রসার ঘটেছিল। শাক্ত ও বৈষ্ণবধর্মের সমন্বয়ের বহু চিহ্ন পুজো-পার্বণ ও ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে। ঝড়গ্ৰামের কেঁউদি গ্ৰামের যোগমায়া মন্দিরের কালীপুজো অতীতের সেই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। শাক্ত ও বৈষ্ণব মতে দেবীর পুজো হয়। 


    ঝাড়গ্ৰামের রঘুনাথপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকার ছোট্ট গ্ৰাম কেঁউদি। শহর থেকে মাইলখানেকের পথ। গ্ৰামের চারিদিকে ধানজমি। মন্দিরে মৃন্ময়ী চতুর্ভুজার নিত্যপুজো হয়। জাগ্ৰত এই দেবীকে ঘিরে এলাকায় নানা লোকশ্রুতি ছড়িয়ে আছে। স্থানীয় সাধক হাড়িরামের নামও দেবী যোগমায়ার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে। যা এই পুজোর মাহাত্ম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মা কালী  মন্দিরে কন্যারূপে পূজিতা হন। এই পুজোর শুরু গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে। দেড় বছরের কন্যার মৃত্যু হলে হাড়িরাম মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। প্রতি রাতে গ্ৰামের শ্মশানে মেয়ের সমাধিস্থলে যেতেন। তাঁর কান্না শ্মশান ছাড়িয়ে গ্ৰামে এসে পৌঁছাত। সেই সময় শ্মশানে তিনি দেবী যোগমায়ার দেখা পান। যোগমায়া তাঁকে কন্যারূপে পুজো করার আদেশ দেন। বৈষ্ণব হাড়িরাম দেবীর আদেশ পেয়ে বাড়ির উঠোনে বেলগাছের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা শুরু করেন। দীর্ঘ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করার পর অমাবস্যায় খড়ের চালাঘর দেওয়া মাটির তৈরি ঘরে দেবী যোগমায়ার পুজো শুরু করেন। দেবীর পুজো শাক্ত ও বৈষ্ণব, দুই মতেই করতেন। মন্ত্র ছিল 'হরে কৃষ্ণ হরি রাম, কালী কৃষ্ণ রামরাম’। আজও সেই প্রথা মেনেই এই দেবীর   পুজো করা হয়। বর্তমানে হাড়িরামের ছেলে শিশির দাস সেবাইতের দায়িত্বে আছেন। পুজোর প্রথায় ও রীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। শিশিরবাবু বলেন, বাবা সাধক মানুষ ছিলেন। কন্যাকে হারানোর পর তাঁর জীবনে পরিবর্তন আসে। দেবীর নির্দেশ পেয়েই তিনি যোগমায়ার পুজো শুরু করছিলেন। সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। প্রথমে খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির মন্দির ছিল। সেই জায়গায় পরে পাকা মন্দির তৈরি করা হয়েছে। দেবীর পুজো শাক্ত ও বৈষ্ণবমতে হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দির মায়ের পুজো দিতে আসেন। কালীপুজোর সময় ধুমধাম করে মায়ের পুজো হয়। রাত ২টো থেকে পুজো শুরু হয়‌। ভোর পর্যন্ত পুজো চলে। এবারও মায়ের পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। 


    পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা প্রদীপ রায় বলেন, মায়ের এই মন্দিরে বারবার ছুটে আসি। সাধক হাড়িরাম ও এই দেবীকে ঘিরে নানা লোকশ্রুতি ছড়িয়ে আছে। কথিত আছে, তন্ত্রসাধনায় তিনি ত্রিশক্তি লাভ করেছিলেন। জীবনের কঠিন সময়ে দেবী যোগমায়া তাকে পথ দেখিয়েছিলেন। দেবীর দেওয়া মন্ত্রেই তিনি দেবীর পুজো করতেন। আশি বছর ধরে চলে আসা পুজোর এই প্রথা ও রীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। ভক্তরা মায়ের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য এই মন্দিরে বারবার ছুটে আসেন। ঝাহগ্ৰাম শহরের নতুনডিহি এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের পূরবী রায় বলেন, প্রতিবছর কালীপুজোয় কেঁউদির মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে যাই। মন্দিরে গেলে সাধক হাড়িরামের সাধনস্থলে পুজোর ফুল দিই। কালীপুজোয় এবারও মাকে পুজো দিতে যাব।
  • Link to this news (বর্তমান)