জলপাইগুড়ি শহরে বেজিংয়ের বৌদ্ধগুম্ফা, কালীপুজোয় এবার ‘পুরীর জগন্নাথ’ দর্শন
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: কালীপুজোয় এবার ‘পুরীর জগন্নাথ’ দর্শন। জলপাইগুড়ির নবারুণ সঙ্ঘে এবারের থিম পুরীর জগন্নাথ ধাম। ওই মন্দিরেই প্রতিষ্ঠা করা হবে নিমকাঠের জগন্নাথ বিগ্রহ। পুরী থেকেই আনা হচ্ছে বিগ্রহ। মণ্ডপে থাকছে মাকালীর আরএক রূপ বিমলা। উদ্যোক্তাদের দাবি, যাঁদের এখনও পুরীর মন্দির দর্শন হয়নি, তাঁরা এবার কালীপুজোয় নবারুণ সঙ্ঘের পুজোতে এলেই চাক্ষুস করতে পারবেন জগন্নাথ ধাম। হুবহু পুরীর মন্দিরকে মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলতে ওড়িশা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে পটচিত্র শিল্পীদের।
পুজো কমিটির সম্পাদক তথা অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজেশ মণ্ডল বলেন, এবার আমাদের পুজো ৬৬ তম বর্ষ। প্রতিবারই চমক দেওয়ার চেষ্টা করি। এবার তুলে ধরা হচ্ছে পুরীর জগন্নাথ ধাম। পুরীতে জগন্নাথদেবের যে বিগ্রহ রয়েছে, ঠিক তার আদলে নিমকাঠের তৈরি বিগ্রহ থাকবে আমাদের মণ্ডপে। পুরী থেকেই তা নিয়ে আসা হচ্ছে।
নবারুণ সঙ্ঘকে টেক্কা দিতে চেষ্টার কসুর করছে না জলপাইগুড়ির দাদা ভাই ক্লাব। তাদের এবারের থিম চীনের বেজিংয়ের বৌদ্ধগুম্ফা। মাঠজুড়ে মণ্ডপ হচ্ছে। নদীয়ার নবদ্বীপের শিল্পীরা একমাস ধরে দিনরাত এককরে মণ্ডপ তৈরির কাজ করে চলেছেন। পুজো কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের মণ্ডপের উচ্চতা ৮২ ফুট। চওড়া হচ্ছে ৮৫ ফুট। প্লাস্টিকের চামচ, প্লাস্টিকের বোতল, পাইপ, থার্মোকল ও পুঁতি দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে। থাকছে থিমের প্রতিমা। শিলিগুড়ির কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আসছে। সঙ্গে থাকছে চন্দননগরের চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। পুজোয় আমরা তিনশোজন দুঃস্থ মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেব।
জেলায় বিগ বাজেটের কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম জলপাইগুড়ি শহরের যুব ঐক্যের পুজো। ফণীন্দ্রদেব ইনস্টিটিউটের মাঠে এই পুজোর এবারের থিম ‘স্বর্ণ মহামায়া মন্দির’। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু হচ্ছে মণ্ডপ। মণ্ডপের পাশাপাশি এদের চন্দননগরের আলোকসজ্জায় থাকছে অভিনবত্ব। অন্তত ১০টি আলোর গেট করা হচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তাঁদেরও শীতবস্ত্র প্রদানের কর্মসূচি রয়েছে। থাকছে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্লে ব্যাক সিঙ্গার থেকে রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চ কাঁপানো শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি রাজবাড়িতেও কালীপুজোর প্রস্তুতি চলছে। রাজ পুরোহিত শিবু ঘোষাল জানিয়েছেন, রাজবাড়ির মন্দিরে অষ্টধাতুর কালীমূর্তি রয়েছে। সারা বছর ওই বিগ্রহের পুজো হয়। কালীপুজোর দিন জাঁকজমক করে মায়ের পুজো হয়ে থাকে। রীতি মেনে মায়ের সামনে দেওয়া হয় আমিষ ভোগ। হবে পাঁঠাবলি।
একটা সময় রাজবাড়ির কালীমায়ের পায়ে বেড়ি পরানো ছিল, যাতে দেবী কোথাও চলে যেতে না পারেন। বেড়ি বাঁধা ‘জয়কালী’র সামনেই নিবেদন করা হতো খিচুড়ির সঙ্গে পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, তরকারি, পাঁচরকম মাছ ও মাংস। মাছের পদের মধ্যে থাকে কাতলা মাছের ঝাল, ইলিশের ঝোল, বোয়ালের রসা, পটল চিংড়ি এবং চিতল মাছের মুইঠ্যা। সঙ্গে পাঁঠার মাংস। এখন অবশ্য দেবীর পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছে। - নিজস্ব চিত্র।