রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: ভারত-ভুটান সীমান্তের জিরো পয়েন্ট। সেই জিরো পয়েন্টের কয়েক মিটার আগে আমাদের দেশের ভিতরে পাহাড়ী টিলার উপর দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন মাকরাপাড়া দক্ষিণা কালীর মন্দির। মন্দিরের ঠিক পিছনেই সবুজ সারি সারি পাইন, ঝাউ এবং ওক গাছে ঘেরা নৈসর্গিক ভুটান পাহাড়। মাকরাপাড়ার সেই প্রাচীন দক্ষিণা কালী মন্দিরে সারা বছর বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে ভুটানের গোমটু এলাকার একটি সিমেন্ট কোম্পানি।
ডুয়ার্সের মাকরাপাড়ার সেই প্রাচীন দক্ষিণা কালী মন্দিরের কালীপুজো এবছর ৭৪ বছরে পড়ল। পুজোর জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। এই প্রাচীন কালী মন্দির মাকরাপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের অধীনে আছে।
তখন ব্রিটিশ জমানা সবে শেষ হওয়ার মুখে। বাগানের মাঠের পাশে থাকা একটি বিশাল বট গাছের নীচে অস্থায়ী মন্দিরে মায়ের পুজো হতো। কথিত আছে, সেই সময় কালী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান মাকরাপাড়া বাগানের তৎকালীণ ম্যানেজার। স্বপ্নাদেশে মা দক্ষিণা কালী তখনকার বাগান ম্যানেজারকে স্থায়ী মন্দির তৈরি করে তাঁকে সারা বছর পুজো করার নিদান দেন।
ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর বাগান কর্তৃপক্ষের অধীনে দুই দেশের মাঝে জিরো পয়েন্টে ১৯৫০ সালে পাহাড়ী টিলার উপর মায়ের মন্দির তৈরি হয়। মন্দির তৈরির সালকে ভিত্তি হিসেবে ধরে শুরু হয় মাকরাপাড়া দক্ষিণা কালী মন্দিরের পুজো।
মন্দির তৈরির বছর থেকে মাকরাপাড়া দক্ষিণা কালী মন্দিরের স্থায়ী পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত হন বীরপাড়ার কলেজপাড়ার বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী। বিশ্বেশ্বরবাবুর মৃত্যুর পর পুরোহিত হিসেবে নিয়োজিত হন তাঁর ছেলে প্রদীপ চক্রবর্তী। প্রদীপবাবুর পর বংশ পরম্পরায় মাকরাপাড়া দক্ষিণা কালী মন্দিরের পুরোহিত এখন তাঁর ছেলে সন্দীপ চক্রবর্তী।
মাকরাপাড়ার দক্ষিণা কালীর পুজোয় আগে পাঁঠা বলি দেওয়া হতো। কিন্তু রক্তপাত এড়াতে পাঁঠা বলি দেওয়ার রেওয়াজ তুলে দেওয়া হয় পরবর্তীতে। এখন প্রতীকী হিসেবে পুজোর দিন অর্ধরাতে জোড়া ডাব বলি দেওয়া হয়। মাকরাপাড়া বাগানের ম্যানেজার দীপেশ করণ বলেন, পুজোর দিন ভক্তদের মানত করা পাঁঠা, পায়রা এখন শুধু মায়ের নামে উৎসর্গ করে দেওয়া হয়।
মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত সন্দীপবাবু বলেন, পুজোর দিন মাকে এখানে বোয়াল মাছের ভোগ দেওয়া হয়। জিরো পয়েন্টে গড়ে ওঠা মাকরাপাড়ার দক্ষিণা কালী মন্দিরে যেতে হয় ৫১টি সিঁড়ি ডিঙিয়ে।
মায়ের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে মন্দিরে বিনা পয়সায় সারা বছর ধরে
বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভুটানের
গোমটু এলাকার সিমেন্ট কারখানাটি। এমনই মহিমা ছড়িয়ে আছে মাকরাপাড়ার দক্ষিণা কালী মন্দিরের মায়ের।
পুজোর দিন মাকরাপাড়ার দক্ষিণা কালী মন্দিরে ভুটানের থিম্পু, পারো, গেলিফু, সামসি, ফুন্টশোলিং, নেপালের কাঠমাণ্ডু এমনকী সিকিমের গ্যাংটক থেকেও ভক্তরা এসে ভিড় জমান। এছাড়া গোটা ডুয়ার্স থেকেও ভক্তরা ভিড় করেন। যেহেতু বলি প্রথা নিষিদ্ধ সেই জন্য পুজোর দিন ভক্তদের মানত করা পায়রা মায়ের উদ্দেশ্যর উৎসর্গ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। উৎসর্গকৃত সেই পায়রা চলে যায় ভুটানের পাহাড়ে। নিজস্ব চিত্র।