ডাকাত সর্দারদের পুজোই এখন সর্বজনীন, বিশে-রঘু-গগনরা বেঁচে শুধু জনশ্রুতিতে
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: সে এককালের কথা। জল জঙ্গল আর ডাকাতের দাপট তখন হুগলিতে। বসবাস রাজা, জমিদার, ধনবান মানুষদের। ফলে ডাকাতদেরও বাড়বাড়ন্ত। তখন জলপথে যাওয়া যেত আজকের মহানগর কলকাতায়। কখনও কখনও অধুনা বাংলাদেশেও এ বাংলার ডাকাতরা হানা দিতে যেতেন। আর হতো একাধিক ডাকাতিয়া কালীপুজো। তারপর গঙ্গা অনেকবার বদলেছে গতিপথ। উঠেছে নেমেছে অনেক জোয়ার, ভাটা। কালে কালে বিদায় নিয়েছে বাংলা কাঁপানো ডাকাতদের দলও। তবে ফেলে গিয়েছে জনশ্রুতি আর ডাকাতিয়া কালী। কালের প্রভাবে সেই সব দেবী প্রতিমার পুজো এখন সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। কালীপুজো এলে সে মন্দিরগুলিতে ভিড় বাড়ে। আর উস্কে ওঠে ডাকাতদের ইতিহাস।
বাংলায় নদীর গভীর ঘূর্ণিময় অংশ ‘দহ’ নামে পরিচিত। ‘দহ’ ছিল ডাকাতদের হামলা চালানোর উপযুক্ত নিরাপদ জায়গা। এমনই এক এলাকা হুগলির বলাগড়ের ডুমুরদহ। বাংলার কুখ্যাত ডাকাত বিশে ওরফে বিশ্বনাথের এলাকা ছিল এই ডুমুরদহ। জনশ্রুতি, ডুমুরদহের বুনোকালী তারই প্রতিষ্ঠিত দেবী। আজও সেই জনশ্রুতি জীবন্ত। ডাকাতদের রমরমার কালে বুনোকালী মন্দিরে নরবলি চালু ছিল। বর্তমানে বৈষ্ণবমতে পুজো হয়। কেউ বলির মানত করলে ছাগের কান কেটে কলাপাতায় করে তা দেবীর পায়ে রাখা হয়। বিশের মতোই দুর্দান্ত ও কুখ্যাত ছিলেন রঘুডাকাত। বাংলায় একাধিক রঘু ডাকাতের গল্প পাওয়া যায়। তবে তাঁরা এক না কি অনেক, তা নিয়ে বিস্তর চর্চা আছে। হুগলির পুণ্যতীর্থ ত্রিবেণীর কালীপুজোতে জড়িয়ে আছে এক রঘুডাকাতের নাম। সাবেক বন্দর নগর সপ্তগ্রামের অন্যতম বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল বাসুদেবপুর। সেখানে আজও পুজো পান রঘুডাকাতের দক্ষিণাকালী। রঘুর পরে ওই পুজো চালু রেখেছিলেন আরেক কুখ্যাত ডাকাত বুধো। হুগলির ত্রিবেণীর ডাকাতিয়া কালী ভীষণদর্শনা। দেবীর ভোগও ভিন্ন রকমের। তাঁকে পুজোর সময় ল্যাটা মাছ পুড়িয়ে ভোগ দেওয়া হয়।
গত প্রায় ১৫বছর ধরে হুগলির সিঙ্গুর রাজ্য রাজনীতির অন্যতম চর্চিত জনপদ। প্রাচীন হুগলিতে সেই সিঙ্গুরের পরিচয় ছিল গগনডাকাতের নামে। আর গগনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মা সারদার গল্প। জনশ্রুতি, সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুরে কালীর সাধনা করতেন গগন। অসুস্থ পরমহংসদেবকে দেখতে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার পথে গগনের খপ্পরে পড়েছিলেন সারদাদেবী। কিন্তু মা সারদার মধ্যে আচমকা কালীকে দেখতে পেয়েছিল গগন। সেই অলৌকিক ঘটনার জেরে রক্ষা পেয়েছিলেন সারদাদেবী। পরে তাঁকে বসিয়ে চাল ও কলাই ভাজা খাইয়েছিল ডাকাত। রামকৃষ্ণের কাছে পৌঁছেও দিয়ে এসেছিলেন। পুরুষোত্তমপুরের ডাকাতকালীকে এখনও কলাই ভাজা ভোগ দেওয়া হয়।