বরানগরের দুই কালীকে পরমহংসদেব মাসি বলতেন, রামকৃষ্ণের পদধূলিধন্য জয়মিত্র ও প্রামাণিকদের মন্দিরে কালীবন্দনা
বর্তমান | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বরানগরে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পদধূলিধন্য জয়মিত্র কালীবাড়ি ও প্রামাণিক কালীবাড়ি। কালীপুজোর রাতে আজও প্রাচীন রীতিনীতি মেনে পুজো হয় দুই বাড়ির মন্দিরে। জানা গিয়েছে, বরানগরের কুঠিঘাটের জমিদার জয়মিত্র কালীবাড়ির ও প্রামাণিক ঘাট রোডের মন্দিরের দুই মা কালীকে মাসি বলে ডাকতেন রামকৃষ্ণ। দুই মন্দিরেই আজও কালীপুজোর রাতে নানা উপাচারে পুজো করা হয় দুই মাতৃমূর্তিকে। পরমহংসদেবের পদধূলিধন্য এই দুই মন্দিরের পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান বহু দর্শনার্থী।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা ১২৫৭ সালের চৈত্র সংক্রান্তির দিন কুঠিঘাটের জেলেপাড়ায় গঙ্গার ধারে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন জয়নারায়ণ মিত্র। এখানকার মায়ের নাম কৃপাময়ী কালী মা। রামকৃষ্ণদেবের পদধূলিধন্য এই মন্দিরের স্থাপত্যরীতিকে বলা চলে প্রাচীন ভারতীয় নবরত্ন শিল্পরীতি। একেবারে শীর্ষে একটি চূড়া, তার পরের ধাপে চারটি এবং নীচের ধাপে আরও চারটি। এই নয়টি চূড়াবিশিষ্ট বলে একে নবরত্ন মন্দির বলা হয়। জয়মিত্র কালীবাড়ির উল্টোদিকে তাঁরই নামাঙ্কিত একটি গঙ্গার ঘাটও আছে। চৈত্র সংক্রান্তির দিন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বলে কালীপুজোর রাতের মতো প্রতিষ্ঠা দিবসেও এই মন্দিরে বিশেষ পুজো‑পাঠ হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, প্রামাণিক কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠা ১২৫৯ বঙ্গাব্দে। এখানকার কালীমূর্তির নাম মা ব্রহ্মময়ী। এই মন্দির বাংলার আটচালা পদ্বতি অনুকরণে নির্মিত। মন্দিরের উচ্চতা ৫২ ফুট। দৈঘ্য ১৮ ফুট পাঁচ ইঞ্চি, প্রস্থও ১৮ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। মায়ের মূর্তিটির উচ্চতা ২ ফুট তিন ইঞ্চি। জানা যায়, প্রামাণিকরা বরানগর অঞ্চলে বর্ধিষ্ণু পরিবার ছিলেন। এই বংশের প্রয়াত কামদেব দে আনুমানিক দশম বঙ্গাব্দে বর্ধমান জেলার অন্তর্গত পলিমপুর গ্রামে বাস করতেন। পরে তাঁর অধস্তন প্রয়াত কৃষ্ণদাস দে আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দীতে ব্যবসা উপলক্ষে বরানগরে এসে বসবাস শুরু করেন। পরে প্রামাণিক উপাধি প্রাপ্ত হন। এরপর তাঁর অধস্তন প্রয়াত দুর্গাপ্রসাদ দে ও রামগোপাল দের বিশেষ উদ্যোগে ১২৫৯ বঙ্গাব্দে এই কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।