সমন্বয়ের অভাব! বীরভূমের কোর কমিটিকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি, দ্রুত বৈঠকের নির্দেশ মমতার
প্রতিদিন | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
দেব গোস্বামী, বোলপুর: বীরভূমে কেন সমন্বয় নেই? কোর কমিটিকে ছাড়া কীভাবে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হচ্ছে? একমঞ্চে সবাই কেন একত্রিত হচ্ছেন না? বারবার কেন সূচি পরিবর্তন হচ্ছে? কানে খবর পৌঁছনো মাত্র এসব প্রশ্ন তুলে তড়িঘড়ি কোর কমিটির বৈঠক ডাকার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। অনুব্রত মণ্ডলকে জেলা সভাপতি রেখে দলনেত্রীর গড়ে দেওয়া ছয় সদস্যের কোর কমিটি জেলার দলীয় সংগঠন চালাবে, এমনই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। কোর কমিটির এক সদস্যকে নির্দেশ আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সরগরম জেলা থেকে রাজ্য রাজনীতি।
কোর কমিটির অনুমোদন ছাড়ায় জেলার বিভিন্ন ব্লকে একের পর এক বিজয়া সম্মেলনতে অংশগ্রহণ করছেন অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর অনুগামীরা। বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত মণ্ডল এবং সভাধিপতি কাজল শেখ সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেও, প্রকাশ্যে জেলার কোনও বিজয়া সম্মিলনীতে একমঞ্চে দেখা যায়নি তাঁদের। এবার সেই কর্মসূচিতেই হস্তক্ষেপ করল রাজ্য নেতৃত্ব। একসঙ্গে চলার কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে তাঁদের। দলনেত্রীর ঠিক করে দেওয়া ছয় সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সভাধিপতি কাজল শেখ, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ ও সুদীপ্ত ঘোষ। যদিও নির্বাচনের আগে কোর কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন বীরভূমের সাংসদ শতাব্দীর রায় ও বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল।
তবে উল্লেখযোগ্যভাবে এই কোর কমিটি ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনে শুধু ভালো ফল করেছে তাই নয়, শান্তিতেই নির্বাচন হয়েছে বলে পুলিশের রিপোর্ট। স্বভাবতই এর পর দুর্গাপুজোর আগে তিহাড় জেল থেকে জামিনে ফিরে আসার পর অনুব্রতকে রেখে কোর কমিটিকে দিয়ে দল চালাতে চাইছে তৃণমূল। যদিও কোর কমিটির এক সদস্যের দাবি, ‘‘চলতি বছরের ২৪ আগস্টের পর আর জেলায় কোর কমিটির বৈঠক হয়নি।” দলনেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল বোলপুর, সিউড়ি এবং রামপুরহাট ? তিনটি মহকুমাতেই ঘুরে ঘুরে প্রতি মাসে চারটি কোর কমিটির বৈঠক করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। ব্লকের কর্মসূচি থেকে জেলায় কোন ইস্যুতে প্রচার চলবে, তা স্থির করত কোর কমিটি। সেই অনুযায়ী জেলার রাজনীতিতে একসঙ্গেই ঝাঁপাত দল।
তবে কি দ্রুত কোর কমিটির বৈঠক হতে চলেছে জেলায়? এই নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে দলীয় অন্দরে। অন্যদিকে, নানুরে বর্তমানে যথেষ্ট প্রভাবশালী নেতা কাজল শেখ অনুব্রতের ‘বিরোধী গোষ্ঠী’ বলে পরিচিত। সেখানকার আর এক নেতা গদাধর হাজরা ও প্রাক্তন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আবদুল করিম খান অনুব্রতের বেশি কাছের। নানুরের বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়, অনুব্রত এবং কাজলের সম্পর্ক ঠিক কেমন। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই একসঙ্গে চলার বার্তা কি তাহলে দলের জেলা সভাপতিকেই দেওয়া হল?
কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী জানান, ”কালীপুজোর পরেই হবে কোর কমিটির বৈঠক। সর্বসম্মতিক্রমে জেলা জুড়ে চলছে বিজয়া সম্মেলনী। তবে দিদি যেটা নির্দেশ দেবেন সেটাই মেনে চলতে হবে।’’ অন্যদিকে, সভাধিপতি কাজল শেখ জানান, ‘‘দীর্ঘদিন কোর কমিটির বৈঠক হয়নি। আহ্বায়ক একমাত্র বৈঠক ডাকতে পারেন। দল বা নেত্রী কী নির্দেশ দিয়েছেন, আমার জানা নেই। তবে দলনেত্রী যা নির্দেশ দেবেন সেটাই মেনে চলবেন সকলে।’’ যদিও এ বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।