গান ধরলেন রামপ্রসাদ, অবাক ‘ভালো ডাকাত'… তাদের তরবারি আজও ডাকাতে কালীর মন্দিরে
হিন্দুস্তান টাইমস | ২৯ অক্টোবর ২০২৪
চারপাশে জঙ্গল। তার মাঝে মা কালীর সাধনা। আনুমানিক ৫০০ বছর আগের কথা। বেশ কিছুটা দূরে গঙ্গা। গা ছমছমে গোটা এলাকা। পায়ে চলা সরু রাস্তা। চার পাশে গাছ গাছালি। দিনের বেলাতেও সেই পথে বিশেষ কেউ যেতেন না। আর সেখানেই ছিল ডাকাতের ডেরা। কালীপুজো করে তারা বের হত ডাকাতিতে। তবে ওই যে বলে ডাকাতটা কী ভালো! হ্যাঁ সেই ‘ভালো ডাকাতের’ প্রতিষ্ঠিত ত্রিবেণীর ডাকাতে কালী মন্দির। আসলে বিধুভূষণ ঘোষের প্রতিষ্ঠিত এই দেবী। তিনি ছিলেন ডাকাত। কিন্তু ভালো ডাকাত।
আজ আর সেই জঙ্গলঘেরা ব্যাপারটা নেই। তবুও এই মন্দির প্রাঙ্গনে গেলে কোথাও যেন অনুভব করা যায় সেই ফেলে আসা দিনের কথা। কালীপুজোর আগে খোঁজ নিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
কালীমন্দিরের পুরোহিত সুমন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তৎকালীন সময়ে ত্রিবেণীতে বাজার ছিল, সপ্তগ্রামে বন্দর ছিল।গঙ্গা ছিল বিরাট চওড়া। পুরোটাই জঙ্গলে ভর্তি। আনুমানিক প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা। আমরাও সঠিক বলতে পারি না। জঙ্গলের মধ্যে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তৎকালীন সময় বিধুভূষণ ঘোষ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই মন্দির। তিনি ছিলেন বাংলার ডাকাতদের অন্যতম। ডাকাতি করে সব গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। মা এখানে অত্যন্ত জাগ্রত।
বলে চলেন পুরোহিত।…' একটা সময় রামপ্রসাদ সেন এখান দিয়ে ফিরছিলেন। হালিশহরে ওনার বাড়ি। গঙ্গা পার হয়ে হালিশহরে যাবেন। ডাকাতরা রামপ্রসাদকে ধরে ফেলেন। তখন ওখানে নরবলি প্রথা চালু ছিল। রামপ্রসাদকে নরবলি দেবে এমন একটা পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছে। সেই সময় রামপ্রসাদ বলেন, আমার একটা মনোবাসনা আছে। আমায় পূর্ণ করতে দাও। তখন ডাকাতরা বলল, ঠিক আছে তোমার মনোবাসনার কথা বলো। মাকে গান শোনাব, তখন রামপ্রসাদ গান ধরলেন, বিপদকালে ব্রহ্মময়ী আসেন কি না আসেন দেখি….তখন ডাকাতরা দেখলেন যে মা সেই রামপ্রসাদ। এমন একটা প্রতিচ্ছবি। সেদিন থেকে বন্ধ হল নরবলি। তবে ল্যাাটা মাছ পোড়া ভোগ মাকে দেওয়া হয়। কালীপুজোয় গুপ্ত পুজো হয়। '
আর একটি বিশেষত্ব আছে এই মন্দিরে। সেটা হল এখানে দেবীর হাতে থাকে তরোবারি। আসলে যে তরবারি একদিন ব্যবহার করা হত ডাকাতির কাজে সেই তরবারিই রঘু ডাকাতের দল তুলে দিয়েছিল মায়ের হাতে। মা- তো জগতের রক্ষাকর্তা। তিনিই তো অশুভের বিনাশ করবেন। জাগ্রত হবে শুভ শক্তি।
সেই ভালো ডাকাতের দল আর নেই। আছে ডাকাতে কালী। সেই মন্দিরে চলছে কালীপুজোর প্রস্তুতি। আর চলছে সংস্কার। পুরনো গঠনকে অক্ষুন্ন রেখেই চলছে সংস্কার।