নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব অমল মল্লিক। দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে কান্দি বাস স্ট্যান্ডের বাজারে এক নাগাড়ে ফলের দরদাম করছেন। কয়েকটি দোকান ঘুরে শুধু দরদাম করে গেলেন। কিনলেন যৎসামান্য কিছু ফল। মাত্র দু’ দিনের ব্যবধানে অধিকাংশ ফলেরই দাম বেড়েছে কেজিতে দশ থেকে কুড়ি টাকা। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে গত তিনদিনের বৃষ্টির পর আনাজপত্রের দামও আকাশছোঁয়া। কালীপুজোর আগে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বহরমপুরের স্বর্ণময়ী বাজার, খাগড়া বাজার, নতুন বাজার, গোরাবাজার, মধুপুর বাজার, কোর্ট মার্কেট, কান্দি বাস স্ট্যান্ড, বাজার সর্বত্র নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। পুজো উপলক্ষ্যে ফুলের দামও বেশ চড়া। জবার মালা থেকে গাঁদা ফুলের মালা বিকোচ্ছে চড়া দামে।
এদিন বহরমপুর শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেল, আপেল ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ন্যাসপাতি ২৫০ টাকা কেজি, মোসম্বি লেবু ১৫ টাকা পিস, বেদানা ২৫০ টাকা কেজি, পাকা পেঁপে ৮০-১০০ টাকা কেজি, তরমুজ ৪০-৫০ টাকা কেজি, কলা ৬০-৮০ টাকা ডজন। কমলালেবু প্রতিটি ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় সব্জির দামও অনেক বেশি। পটল ৫০ টাকা কেজি, টমেটো ৯০ টাকা কেজি, শশা ৪০-৫০ টাকা কেজি, উচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, ঢ্যাঁড়শ ও ঝিঙে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
বহরমপুরের কোর্ট মার্কেটের ফল ব্যবসায়ী গণেশ হালদার বলেন, কালীপুজো ও লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে সামান্য একটু দাম বেড়েছে। মাঝে কয়েকদিন বৃষ্টির জেরে একদম বিক্রি হয়নি তবে এদিন সকাল থেকে ভালো বিক্রি শুরু হয়েছে পুজো উপলক্ষ্যে অনেকেই ফল ও ফুল কিনছেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় সবাই কম পরিমাণে কিনছেন।
কোর্ট মার্কেটের সব্জি ব্যবসায়ী রেশমা চৌধুরী বলেন, লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো উপলক্ষ্যে সব্জির দাম সামান্য বেড়েছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে জিনিস কিনছি, তা থেকে ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছি। কেউ ২০০ গ্রাম কিংবা ৩০০ গ্রাম করে সব্জি কেনেন। তাতে আমাদের খুব একটা লাভ হয় না।
ক্রেতা অমলবাবু বলেন, বছরে বাড়িতে এই একটা পুজো করি। গিন্নি তো লম্বা ফর্দ ধরিয়েছে। মাসের শেষে বাজারে এসে অবস্থা খুবই খারাপ। পাঁচ রকমের ফল কিনতেই হাজার টাকা বেরিয়ে গেল। আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো করার কোনও উপায় নেই। কোনও রকমের নিয়ম রক্ষার পুজো করতে হবে।
নতুন বাজারের ফুল ব্যবসায়ী রেনুকা গোস্বামী বলেন, সারা বছর আমরা জবার মালা বিক্রি করি কুড়ি টাকা কিংবা ত্রিশ টাকা দরে। কালীপুজোর সময়ে শীতের টান পড়ে যাওয়ায় জবাফুল ফোটে কম। তাই এখন মালার দাম চড়া। ১০৮ জবার মালা ৬০-৭০ টাকা দামে বিক্রি করছি। কোথাও কোথাও ১০০ টাকাও দাম নিচ্ছে। কালীপুজোর দিন সকাল থেকে দাম আরও বাড়বে।
বুধবার কালীপুজোর আগের দিন বাঙালিরা অনেকেই ১৪ রকমের শাক খান। কোর্ট মার্কেটে শাক বিক্রি করতে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ১৪ রকম শাকের এক একটি প্যাকেট বানানো হয়েছে। ২০ টাকা ও ৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা অনুরাধা দাস বলেন, আগে আলাদা আলাদা শাক কিনে সেগুলি বেছে রান্না করতে হতো। আর এখন রেডিমেড এক জায়গাতেই ১৪ শাক পাওয়া যাচ্ছে। কুড়ি টাকা দিয়ে সেই শাক কিনে নেওয়া সুবিধা।