নাগা সন্ন্যাসীদের চালু কালীপুজোয় কড়া নিয়ম, লঙ্ঘন হলেই বিপত্তি
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: তখন জামালপুরে দামোদরের পাড়ে ছিল মহাশ্মশান। জনবসতি ছিল না। চারদিক খাঁ খাঁ করত। শুধু কয়েকজন নাগা সন্ন্যাসীর বাস ছিল। চিতার ছাই মেখে ঘুরে বেড়াতেন তাঁরা। সেই নাগাসন্ন্যাসীরা শ্মশানের একপাশে শক্তির দেবী কালী মায়ের আরাধনা করতেন। নিজেরাই মন্ত্র পড়তেন। পুজোর জোগাড় করতেন। পরে জনবসতি গড়ে ওঠে। সেই শ্মশান আর নেই। নাগা সন্ন্যাসীরাও চলে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের চালু করা পুজো এখনও রয়েছে জামালপুরে। দত্তবাড়ির সদস্যরা সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজোর দেখভাল করেন।
পুজোর উদ্যোক্তা গোপাল দত্ত বলেন, মায়ের পুজো নিয়মনিষ্ঠা মেনে করতে হয়। অনিয়ম হলেই বিপত্তি হয়। কয়েক বছর আগেও তা পুরোহিত টের পেয়েছেন। ঘট উল্টে আবার সোজা হয়ে গিয়েছিল। মায়ের নৈবেদ্যে কলার থোড় চাই ই চাই। এছাড়া কারণ নিবেদন করতে হয়। যুগযুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। পরিবারের আর এক সদস্য শক্তিপদ দত্ত বলেন, নিজের হাতে মায়ের মূর্তি করি। মূর্তিতে কোনও বদল আসেনি। মায়ের পুজো দেখতে জামালপুরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসেন। মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। মা অনেকেরই মনোস্কামনা পূরণ করেন। নাগা সন্ন্যাসীরা বহু বছর এই এলাকায় ছিলেন। পরে জনবসতি গড়ে ওঠার পর তাঁদের জীবন যাপন অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁদের চালু করা মায়ের পুজো এখনও একইভাবে চলছে। পুজোর পরের দিন ভোগ নিবেদন করা হয়। বহু মানুষ ভোগ খেয়ে বাড়ি ফেরেন। পুজোর সময় বহু মানুষ মন্দির চত্বরে ভিড় করেন। মন্দির বলতে বেদি রয়েছে। কোনও ছাউনি দেওয়া যায় না।
জামালপুরের হালাড়ার বিপত্তারিণী মায়ের মাহাত্ম্যও কম কিছু নয়। নিত্যদিনই মায়ের পুজো হয়। এলাকার বাসিন্দারা নতুন কিছু করার আগে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে যান। বাইক বা চারচাকা গাড়ি কিনলে এই মন্দিরে তাঁরা পুজো দিয়ে যাবেনই। পুজোর পরের দিন এখানেও কয়েক হাজার ভক্ত মায়ের ভোগ খেয়ে যান। পুণ্যার্থীরা বলেন, বিশেষ পুজো দেখতে জামালপুর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার লোকজন মন্দিরে আসেন। গভীর রাত পর্যন্ত মন্দিরে ভিড় থাকে। মা বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সেই কারণেই তিনি বিপত্তারিণী। বহু বছর ধরে এখানে দেবী পূজিত হয়ে আসছেন। প্রতিদিনই সকাল থেকে পুজো শুরু হয়। বিশেষ দিনগুলিতে লম্বা লাইন পড়ে যায়। স্থানীয়রা বলেন, জামালপুরে শক্তি আরাধনার নানা কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন এই জনপদে নাগা সন্ন্যাসীদের চালু করা পুজো ঘিরেও নানা কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক কালেও অনেকেই তা চাক্ষুষ করেছেন। এমনই দাবি পরিবারের সদস্যদের। এখানে মা সিদ্ধেশ্বরী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন। নিজস্ব চিত্র