জলযন্ত্রণা থেকে রেহাই দিতে তমলুকে চার ব্লকে ১২টি খাল খননের উদ্যোগ
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তমলুক মহকুমার চারটি ব্লককে জলযন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি দিতে একসঙ্গে ১২টি খাল খনন করা হবে। এই প্রথম একসঙ্গে এক ডজন খাল খননের উদ্যোগ নিল প্রশাসন। মঙ্গলবার এই উপলক্ষ্যে তমলুকে জেলাশাসকের অফিসে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী ছাড়াও দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক, সেচদপ্তর, মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশনের অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। সোয়াদিঘি, পায়রাটুঙ্গি, শঙ্করআড়ার মতো বড় খালের পাশাপাশি দেহাটি, কামিনাচক, জঁফুলি, গাজইয়ের মতো খালও রয়েছে। ডিসেম্বর মাস থেকেই খননকাজ শুরু হবে। আগামী বছর এপ্রিল মাস নাগাদ ওই কাজ শেষ হবে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, তমলুক মহকুমা এলাকার বৃষ্টির জল ছোট-বড় প্রায় এক ডজন খাল দিয়ে রূপনারায়ণ নদে পড়ে। বেশিরভাগ খাল দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় মজে গিয়েছে। এই মুহূর্তে খনন জরুরি হয়ে পড়ছে। জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদ যৌথ উদ্যোগে প্রায় ১২টি খাল খনন করবে। এজন্য জেলা পরিষদ থেকে আমরা অর্থ সরবরাহ করব। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, এবছর বর্ষায় পাঁশকুড়া, শহিদ মাতঙ্গিনী এবং কোলাঘাট ব্লকের কিছু এলাকা এক মাসের বেশি সময় জলমগ্ন রয়েছে। নিকাশি সমস্যার সমাধান জরুরি। সেজন্য আমরা তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়া ব্লকে অধিকাংশ খাল খনন করব। ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই খনন কাজ চলবে।
সোয়াদিঘি খাল প্রায় ২২কিলোমিটার দীর্ঘ। এই খাল দিয়ে কোলাঘাট, আংশিক পাঁশকুড়া এবং শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের জল রূপনারায়ণ নদে গিয়ে পড়ে। কিন্তু, এক দশকের বেশি সময় এই খাল খনন হয়নি। যেকারণে খালের মধ্যে নল, খড়িবন হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও ঘাস, কচুরিপানায় ভর্তি। খালপাড় দখল করে দোকানঘর এবং মাছের ভেড়ি তৈরি হওয়ায় নিকাশি সমস্যা সঙ্কটজনক জায়গায় পৌঁছেছে। শুধু সোয়াদিঘি নয়, পায়রাটুঙ্গি, শঙ্করআড়া, গঙ্গাখালি প্রভৃতি খালের অবস্থাও প্রায় একই। গঙ্গাখালি খাল দিয়ে মূলত তমলুক ব্লকের বৃষ্টির জল নিকাশি হয়। কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়ার একটা অংশের জলও ওই খাল দিয়ে রূপনারায়ণ নদে গিয়ে পড়ে। এছাড়া শঙ্করআড়া খাল দিয়ে মূলত তমলুক ব্লকের জল নদীতে গিয়ে পড়ে। দেহাটি খাল দিয়ে কোলাঘাট এবং পাঁশকুড়ার কিছু এলাকার জল রূপনারায়ণ নদে গিয়ে পড়ে।
এক মাসের বেশি সময় কোলাঘাটের ভোগপুর ও দেড়িয়াচক এবং পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি, প্রতাপপুর-১, খণ্ডখোলা পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। পাঁশকুড়া ব্লকের রাধাবল্লভচক পঞ্চায়েতেরও কিছু গ্রাম জলমগ্ন। শহিদ মাতঙ্গিনী বিডিও অফিসের চেম্বারে হাঁটুসমান জল। অফিসের সামনে জল থই থই করছে। বিডিও এবং কর্মীরা অন্য একটি বিল্ডিংয়ে বসছেন। তাঁরা সকলেই গামবুট ব্যবহার করে অফিস করছেন। জেলাশাসক বেশ কয়েকবার জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করার পর এই জলযন্ত্রণা থেকে মানুষজনকে অব্যাহতি দিতে স্থায়ী সমাধান নিয়ে নবান্নে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। রাজ্য সরকারও এখানকার মজে যাওয়া প্রায় ১২টি খাল খননের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে বলেছে। সেইমতো মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। তমলুকের মহকুমা শাসক এবং ওই চার ব্লকের বিডিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, ১২টি খালের খনন কাজ সম্পূর্ণ হলে চার ব্লকে নিকাশি সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে।