সৌমিত্র দাস, কাঁথি: সর্বজনীন শ্যামাপুজোকে ঘিরে আনন্দোৎসবে মেতে ওঠে সৈকতশহর দীঘার খাদালগোবরার চণ্ডীতলা বার্নিং সান ক্লাব। প্রতিবছরই শ্যামাপুজো উপলক্ষ্যে একগুচ্ছ সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির আয়োজন করে এলাকায় সাড়া ফেলে দেয় সাগরতীরের এই ক্লাব। শ্যামাপুজোই এলাকার মানুষের কাছে বড় উৎসব। পুজো ও অন্যান্য অনুষ্ঠান ঘিরে পাঁচদিন রীতিমতো আনন্দের হাট বসে যায়। এবার ৫৬তম বর্ষে পদার্পণ করল পুজো। পুজো উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এলাকাবাসীর মূল আকর্ষণ। বছরভর সমাজের সুস্থ-সংস্কৃতির বিকাশের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে এই ক্লাব।
আজ, বুধবার অঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে আনন্দযজ্ঞের সূচনা হবে। বৃহস্পতিবার রয়েছে মাতৃমণ্ডপ ও মাতৃমূর্তির উদ্বোধন এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহ ঘটোত্তলন। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিমায় নজর কাড়তে চলেছে এই ক্লাব।
১৯৬৮সালে স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণী জানা সহ চারজন বরিষ্ঠ নাগরিক মিলে পুজো শুরু করেছিলেন। সেই সময় এলাকায় কোনও কালীপুজো ছিল না। ক্লাবের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৫৫। সদস্যদের মধ্যে যুবকদের আধিক্য বেশি। রয়েছেন বেশ কয়েকজন মহিলাও। অনেকে বলেন, তৎকালীন সময় এলাকায় বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। রোগব্যাধি প্রতিরোধের কামনায় পুজো শুরু হয়েছিল। আবার অনেকের মতে, চারজনের মধ্যে একজনকে স্বপ্নাদেশে পুজো শুরু করতে বলেছিলেন মা। তারপর থেকেই পুজো শুরু হয়। শুরুর কারণ যাই থাক, সেই পুজো এখনও হয়ে আসছে। যত বছর বেড়েছে, বহর ও আড়ম্বর তত বেড়েছে।
ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিনামূল্যে চক্ষু ও স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবির ছাড়াও রয়েছে হস্তাক্ষর, হাঁড়িভাঙা ও মিউজিক্যাল চেয়ার বিষয়ক প্রতিযোগিতা। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং তরুণীদের দ্বারা পরিবেশিত নাটক ‘অচ্ছুতকন্যা’। শনিবার রয়েছে ক্যুইজ ও যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। রয়েছে পুরুষদের দ্বারা পরিবেশিত কৌতুক নাটক ‘আজব ঘটকালি’। রবিবার সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী। রয়েছে মহিলাদের দ্বারা পরিবেশিত নাটক ‘ভানুমতীর খেল’। তিনদিনে অনুষ্ঠিত তিনটি নাটকই সম্পাদনা করেছেন শিক্ষক তথা ক্লাবের সভাপতি শুভজিৎ জানা।
ক্লাবের সম্পাদক বিশ্বজিৎ জানা। এছাড়া পুজো কমিটির সম্পাদক দেবলীন জানা, সভাপতি সত্যসৌরভ জানা, শুভঙ্কর জানা, উমাপদ শীট সহ সকল কর্মকর্তা-সদস্যই পুজো এবং সমস্ত কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে উৎসাহের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ক্লাবের সভাপতি শুভজিৎবাবু বলেন, আমরা পুজো ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বৃক্ষরোপণ, সমাজ সচেতনতা, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করি। সম্পাদক বিশ্বজিৎবাবু বলেন, পুজো ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মানুষকে আনন্দদান এবং নানা সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁদের পাশে থাকাই আমাদের ব্রত।-নিজস্ব চিত্র