রাত হলেই জঙ্গলে চলে যান কালী, রাজবাড়ির দেবীর পায়ে তাই শিকল
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: অমাবস্যার নিশুতি রাতে মন্দির থেকে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলে চলে যান মা কালী! অনেকেই এই দৃশ্য দেখেছেন। সেকারণে দেবীর ‘চঞ্চলতা’ দূর করতে শিকল বেঁধে রাখা হয় জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির জয়কালীর পায়ে!
বৈকুণ্ঠপুরের রাজারা বারবার তাঁদের রাজধানী বদল করেছেন। কখনও সন্ন্যাসীকাটা কখনও বোদাগঞ্জ কখনও আবার জলপাইগুড়ি। রাজ পরিবারের দাবি, জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির রাজঘাটে অষ্টধাতুর কালীমূর্তি স্থাপন করা হয়। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে সেই মূর্তি রাজবাড়ির বৈকুণ্ঠনাথ মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন রাজকন্যা প্রতিভা বসু।
কথিত আছে, অনেকেই জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির মা কালীকে করলা নদীর পাড় ধরে হেঁটে যেতে দেখেছেন। কেউ বলেন, তিনি গোশালা মোড়ে দেবী চৌধুরানির মন্দিরে নিজের সঙ্গে নিজেই দেখা করতে যান অমাবস্যার রাতে। কারও বিশ্বাস, রাজবাড়ির মা কালী অমাবস্যার রাতে বেড়াতে আসেন শিকারপুরে দেবী চৌধুরানির মন্দিরে।
তিস্তাপাড়ে দেবী চৌধুরানির সাত-আটটি ডেরা ছিল। বলা হয়, শিকারপুর হল দেবী চৌধুরানির ছায়াসঙ্গী ভবানী পাঠকের আস্তানা। আর জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ে জঙ্গলের মধ্যে ডাকাতকালীর মন্দিরে পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে বের হতো দেবী চৌধুরানির দলবল। এখানে অবশ্য প্রথম কালীপুজো শুরু করেন বৈকুণ্ঠপুরের রাজা দর্পদেব রায়কত। এটিকে সদ্যকালীর পুজো বলা হতো। কারণ কালীপুজোর রাতেই প্রতিমা তৈরি হয়ে পুজোর পর ভোরের আগেই তা বিসর্জন হয়ে যেত। এখানে একসময় নাকি নরবলিও হতো!
তখন সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ চলছে। চারদিক অশান্ত। এ হেন পরিস্থিতিতে নিস্তব্ধ রাতে জঙ্গল পথে একা নারীকে দেখে কৌতূহল ছড়ায়। গ্রামে কানাঘুঁষো শুরু হয়, গভীর রাতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, তিনি কি দেবী না মানবী! এরপরই চারদিকে চাউর হয়ে যায়, রাজবাড়ির কালী অমাবস্যার রাতে ঘুরতে বের হন। অগত্যা মন্দিরেই আটকে রাখতে দেবীর পায়ে পরানো হয় বেড়ি। আজও সেই প্রথা বহমান। মন্দিরে দেবীর পায়ের নীচে একটি লোহার আংটা আছে। সেটিতে শিকল বাঁধা। ওই শিকল চলে গিয়েছে মন্দিরের নীচে সুড়ঙ্গে।
রাজ পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, কথিত আছে, রাজবাড়ির মন্দির থেকে মা কালী গোশালা মোড়ে দেবী চৌধুরানির মন্দিরে চলে যেতেন। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে আবার ফিরে আসতেন। মায়ের এই ‘চঞ্চলতা’ দূর করতেই বেড়ি পরানো হয়, যাতে মা মন্দির ছেড়ে যেতে না পারেন।