কালীপুজোর পরেই গ্রামে গ্রামে চোরচুন্নি খেলা, মহড়ায় শিল্পীরা
বর্তমান | ৩০ অক্টোবর ২০২৪
উজ্জ্বল রায়, ধূপগুড়ি: একজন চৌর্যবৃত্তি করে সংসার চালান। চুরি করে ধরা পড়লে জোটে বেদম মার। অপমানিত হতে হয় তাঁকে। চৌর্যবৃত্তি ছেড়ে দেওয়ার কাকুতি মিনতি করতে থাকেন তাঁর সহধর্মিণী। কালীপুজোর পরদিন থেকেই আদিবাসী সমাজে খেলা হয় দেউসি বা ধাউচি আর রাজবংশী সমাজে খেলা হয় চোরচুন্নি। মূলত উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে এই খেলা বেশি করে দেখা যায়।
আদিবাসী ও রাজবংশীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খেলা মূলত খেলে থাকে খুদেরা। তবে বাদ্যযন্ত্র বাজানো এবং চোরের ভূমিকায় অংশ নিতে খুদেদের সহযোগিতা করেন বড়রা। গোটা গ্রাম ঘুরে ঘুরে মানুষের বাড়িতে চোরচুন্নির গান গেয়ে চাল, ডাল, আলু সংগ্রহ করে তাঁরা। সংগ্রহ করা সেসব দিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ভোজের আয়োজন করা হয় বলে জানান কলাকুশলীরা।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেউসি বা ধাউচি বা চোরচুন্নি খেলা বিলুপ্তির পথে। ভাষাকৃষ্টি গবেষক ও লেখকদের একাংশের দাবি, এই গান একদিকে লৌকিক জীবনকে তুলে ধরে, পরোক্ষভাবে তুলে ধরে রাধা-কৃষ্ণের জীবন দর্শন। লেখক ও কবি জগদীশ আসোয়ার বলেন, চোরচুন্নির খেলা ও গান মূলত রাধা-কৃষ্ণকেই স্মরণ করা। তাছাড়া এই গানে লৌকিক দুঃখ-কষ্ট এবং সামাজিক যন্ত্রণাও ফুটে ওঠে। আগের মতো আর এখন চোরচুন্নির গান শোনা যায় না।
এই গান মূলত একজন চোরের জীবনকে নিয়ে। মার খাওয়া পর চৌর্যবৃত্তি ছেড়ে স্বামীকে সামাজিক কাজকর্ম করে উপার্জনের আবেদন জানান স্ত্রী। সেই কথোপকথনই নির্দিষ্ট একটি সুরে গাওয়া হয়। লোকসংস্কৃতি গবেষক রতনচন্দ্র রায় বলেন, চুরি করা যে অন্যায় তা এই খেলার মধ্যে দিয়ে সমাজকে বোঝানো হয়। আর এভাবেই সামাজিক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতিবছর কালীপুজোর পর চোরচুন্নি খেলে থাকেন ধূপগুড়ির একদল যুবক। তাঁদের মধ্যে সুজয় রায় বলেন, আমরা প্রতিবছর এই খেলার আয়োজন করে থাকি। এখন তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। চলছে মহড়াও। ফাইল চিত্র।